ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা: যাদবপুরে (Jadavpur University student death) ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় ধৃতদের বিরুদ্ধে এবার সরাসরি র্যাগিংয়ের অভিযোগ আনতে চলেছে পুলিশ। খুন, সংগঠিত অপরাধের ধারার পাশাপাশি, ধৃতদের বিরুদ্ধে West Bengal Prohibition of Ragging in Educational Institutions Act সেকশন (4) যুক্ত করার জন্য আজই আদালতে আবেদন জানানো হবে পুলিশের তরফে।
র্যাগিং-বিরোধী ধারা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত: সূত্রের খবর, হস্টেল (JU Hostel) থেকে তথ্যপ্রমাণ মেলার পরই ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় র্যাগিং-বিরোধী ধারা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। র্যাগিং-বিরোধী ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে বা বাইরে র্যাগিংয়ে অংশ নেয়, প্রচার করে বা সাহায্য করে, দোষী সাব্যস্ত হলে তার ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়ই প্রযোজ্য হতে পারে।
ছাত্রমৃত্যুতে আগেই উঠেছে র্যাগিংয়ের অভিযোগ। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রথমে ভুয়ো চিঠিতে সই করানো তারপর, উচ্চস্বরে গালিগালাজ করতে বাধ্য় করা। এরপর, বিবস্ত্র করে দেওয়া হয় পড়ুয়াকে। অত্য়াচারের হাত থেকে পালানোর সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, ৯ অগাস্ট রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ের (Jadavpur University) মেন হস্টেলের (JU Hostel) A2 ব্লকের ৩ ও ৪ তলাজুড়ে এই নারকীয় অত্য়াচারই চলেছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, রসায়ন বিভাগের প্রাক্তনী ধৃত শেখ নাসিম আখতার ও সোসিওলজির দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া ধৃত মনোতোষ ঘোষ থাকত ১০৮ নম্বর ঘরে। যাদবপুরের কম্পিউটার সায়েন্সের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ধৃত সত্যব্রত রায় থাকত ১১০ নম্বর ঘরে। মহম্মদ আরিফ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থাকত ৭৪ নম্বর ঘরে। আর এই ৬৫ নম্বর ঘর ফাঁকাই থাকত। পুলিশ সূত্রে খবর, হস্টেলে এই ঘর দাদাদের ঘর বলে পরিচিত ছিল। পুলিশ সূত্রে দাবি ঘটনার রাতে, ৬৮ নম্বর রুম থেকে চারতলার ১০৪ নম্বর রুমে নিয়ে যাওয়া হয় নদিয়ার পড়ুয়াকে। সেখানে আগে থেকেই ছিল নাসিম আখতার ও সত্যব্রত রায়। জোর করে ওই পড়ুয়াকে চিঠিতে সই করানো হয়।
এরপর শুরু হয় হাড়হিম করা অত্য়াচার। চারতলা থেকে তিনতলার ৬১ নম্বর ঘরে ঢোকানো হয়।পুলিশ সূত্রে দাবি, পড়ুয়াকে গালিগালাজ করতে বাধ্য করা হয়। বিভিন্ন ঘরে ঢুকিয়ে পরিচয়ের নামে চলতে থাকে অত্যাচার। এরপর, গন্তব্য ছিল ৭০ নম্বর ঘর!অপমান, অত্যাচার, হেনস্থার যাবতীয় সীমা অতিক্রম করে সেখানেই। পুলিশ সূত্রে খবর, এখানেই বিবস্ত্র করা হয় নদিয়ার পড়ুয়াকে। ভয়, অপমান, আতঙ্কে দিশেহারা সাড়ে সতেরো বছরের তরুণ ছুটতে থাকে হস্টেলের করিডরজুড়ে।৬৫ নম্বর ঘর, যা দাদাদের ঘর বলে পরিচিত...সেখানে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু, পারেনি। পুলিশ সূত্রে খবর, বাথরুমের দিকে বা চারতলায় যাতে যেতে না পারে, পড়ুয়াকে ঘিরে ধরা হয়। ডান দিক দিয়ে কোনওমতে ছুটতে শুরু করে ওই পড়ুয়া। তারপরই, রাত ১১ টা ৪৫ মিনিটে ঘটে যায় ভয়ঙ্কর ঘটনা। তিনতলা থেকে থেকে এক্কেবারে নিচে। তাই প্রশ্ন উঠছে তাহলে কী ধাওয়া করা হয়েছিল পড়ুয়াকে? ছুটতে ছুটতে একেবারে বারান্দার রেলিং-এর কিনারায় পৌঁছে গেছিল সে? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা।
আরও পড়ুন: Nadia: লোকাল ট্রেন বাড়ানোর দাবি, রেল অবরোধ মদনপুর স্টেশনে