কলকাতা: যাদবপুর পড়ুয়ার মৃত্যুর পর একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য উঠে আসছে সামনে। যারা মূলত, শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে দূরে রেখে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ের দোরগোড়ায় এসেছিলেন উচ্চশিক্ষা লাভের আশায়। কিন্তু হস্টেলে আসার পর, কী ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা নিয়ে এবার মুখ খুললেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ের (Jadavpur University) দুই দৃষ্টিহীন ছাত্র।
'আমাদের দরজার সামনে রোজ মদের বোতল ভেঙে ফেলে রাখা হত..'
নিহত প্রাণোচ্ছ্বল ছাত্রটির মতো, ওই পড়ুয়াও বাংলা পড়ার জন্য় মফঃস্বল থেকে এসে ভর্তি হয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ের বিশেষভাবে সক্ষম পড়ুয়া বলেছেন, 'আমাদের দরজার সামনে রোজ মদের বোতল ভেঙে ফেলে রাখা হত। আমরা চোখে দেখি না। পা কাটত। কিন্তু এটাই ছিল যে আনন্দ।' যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ে আরও কত নিরীহ পড়ুয়াকে এই ভয়ঙ্কর, জঘন্য়, অত্য়াচারের শিকার হতে হয়েছে তা কে জানে। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই, হস্টেল জীবন তাঁর কাছে হয়ে উঠেছিল দুঃস্বপ্নের মতো। বিশেষভাবে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও, ভয়ঙ্কর র্যাগিং-রোগের হাত থেকে রেহাই মেলেনি।
'নানা রকম কুৎসিত কান্ড করতে হত'
বিশেষভাবে সক্ষম ওই পড়ুয়া অভিজ্ঞতা শেয়ার আরও বলেন,' হঠাৎ রাত একটার সময় দাদাদের মনে হল, তারা একটু গালাগালি শুনবে। দশজনকে দাঁড় করালো, প্রথমজন একটা গালাগালি দিল। দ্বিতীয় জনকে সেই গালাগালি-সহ আরেকটা নতুন গালাগালি দিতে হবে। তৃতীয় জনকে ওই দুটো বলে আরেকটা নতুন বলতে হবে। কেউ যদি গালাগালি ভুলে যেত শুরু হত অন্য অত্যাচার। হেসে ফেললে তো আর কথাই নেই। নানা রকম কুৎসিত কান্ড করতে হত। প্রচন্ড গরমের মধ্যেও ফুলাহাতা জামা, ফুল প্যান্ট পরা ছিল বাধ্যতামূলক। কেউ ইচ্ছে করলেও বাড়ি যেতে পারত না। সিনিয়রদের পারমিশন নিতে হত।'
'রাত তিনটে পর্যন্ত এই সিনিয়ার দাদাদের ফাইফর্মাস খাটতে হতো..'
একইরকম ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা বিশেষভাবে সক্ষম আরেক পড়ুয়ারও। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে বিশ্ববিদ্য়ালয়ের দোরগোড়ায় এসেছেন তিনিও। যদিও বিকৃত মস্করা তাকেও ছাড়েনি। তাঁর কথায়, প্রতিবন্ধী বলে আমাকে হয়তো দোকানে পাঠানো হতো না কিন্তু রাত তিনটে পর্যন্ত এই সিনিয়ার দাদাদের ফাইফর্মাস খাটতে হতো আমাদের। অসংখ্য গালাগালি বাবা-মা পরিবার তুলে গালাগালি সব চলত। সকালবেলা দাদারা খুব ভালো। সন্ধ্যে হলেই তাদের এক অন্য মূর্তি। কী ভয়ংকর অত্যাচার করত বলে বোঝানো যাবে না।'
আরও পড়ুন, ২-৩ ঘণ্টার মধ্য়ে ধেয়ে আসছে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি, জানাল হাওয়া অফিস
'..প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি'
দুই পড়ুয়ারই অভিযোগ, প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তিনি আরও বলেন, 'কী ভয়ংকর অত্যাচার। আমরা সংগঠিত হয়ে অভিযোগ জমা দিই। তৈরি হয় প্রতিবন্ধীদের নিজস্ব সংগঠন। সেই লড়াই এখনো চলছে। কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেয় না। তাদের কাছে আমাদের প্রমাণ করতে হয় যে আমরা সত্যি বলছি। বরং মুখ খুললে আরও অত্যাচার। যারা মারা যায় কারণ তারা সহ্য করতে পারে না। আর আমরা প্রচন্ড কষ্ট করে এখানে টিকে রয়েছি।' যাদবপুরের আনাচে-কানাচে উঠে আসছে র্যাগিং এর এই গল্প। শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কি ব্যবস্থা নেবে? যারা এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে সরব হবে কর্তৃপক্ষ? সকলে তাকিয়ে সেদিকে।