সুজিত মণ্ডল, নদিয়া: হস্টেল থেকে শুক্রবারই বগুলার বাড়িতে আসার কথা ছিল স্বপ্নদীপের। সবাই অপেক্ষায় থাকলেও আর কোনও দিনই বাড়ি ফিরবেন না যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ( Jadavpur University ) ছাত্র স্বপ্নদীপ। মাত্র ২ দিন ক্লাস করেই শেষ হয়ে গেল তাঁর স্বপ্ন। থেমে গেল স্বপ্নের উড়ান। ছেলের ছোটবেলার ছবি আঁকড়ে ধরে কেঁদে চলেছেন মা। দোষীদের শাস্তির দাবিতে এলাকায় মিছিল করছেন স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে প্রতিবাদ। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি। কিন্তু যে আঁধার নামল তাঁর ঘরে, সে ঘরে আর ফিরবে না আলো।
মায়ের হাহাকার
মায়ের গলায় শুধুই আর্তনাদ। ফিরবে না, ফিরবে না - এই কথাটুকু ছাড়া বাকিটা একেবারেই ছাড়া ছাড়া। অনেক স্মৃতি আসছে ঘুরে ফিরে। ছেলের সঙ্গে বলা শেষ কথাগুলোর স্মৃতি। সন্তানহারা মা স্বপ্না কুণ্ডুর হাহাকার, তিনি কোনওদিন বিশ্ববিদ্যালয় দেখেননি। ছেলে বলেছিলেন, তাঁর পড়ার জায়গাটা পুরো ঘুরে দেখাবেন। কিন্তু তা আর হল কই।
ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল ফোনে। তাঁকে আনতে যাওয়ার কথা ছিল বাবা-মায়ের। কিন্তু তার আগেই এল দুঃসংবাদ। মা বললেন, ' আমি আর ওর বাবা আনতে যেতাম। আমি তো চিনি না, ওর বাবা নিয়ে যাবে আমাকে। ' ওর বাবা আমাকে নিয়ে যাবে। ' কথার খেই হারিয়ে ফেলছিলেন বারবার।
শুধু মনে পড়ছিল ছেলের বলা কথাগুলো। ' ছেলে বলছে, মা তুমি এস। তুমি তো আমার ইউনিভার্সিটি দেখোনি... আমার ছেলে.... আমি বললাম, রান্নাবান্না করে নিয়ে যাব? বলল- না। ফল কিনে নিয়ে যাব? বলল - নিয়ে এস।' তারপরই ফের হাহাকার করে কান্না।
পরিবার সূত্রে খবর, গত ৩ তারিখ যাদবপুরে স্বপ্নদীপকে বাংলা অনার্সে ভর্তি করেন বাবা। হস্টেল না মেলায় রবিবার রেখে আসেন হস্টেলের সিনিয়র দাদাদের কাছে। সেই রেখে আসাই শেষ।
শুক্রবার সকালেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রর রহস্যমৃত্যুকাণ্ডে বাবার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে । যোগ করা হয়েছে সম্মিলিত অপরাধের ধারাও। চলছে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ। হস্টেলে থাকা কোনও সহপাঠীর বিরুদ্ধে ছেলেকে উত্যক্ত করার অভিযোগ করেছে পরিবার।
আরও পড়ুন :
যাদবপুরে ছাত্র মৃত্যুতে প্রশাসনকে ধিক্কার সুকান্তর, রাজ্যপালের দিকে আঙুল তুললেন ব্রাত্য