কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা : যাদবপুরে পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় সোমবারই খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিল মৃত অনামিকা মণ্ডলের পরিবার। সেই তদন্তের নিরিখে মঙ্গলবার যাদবপুরের ক্যাম্পাসে আসে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন খোদ কলকাতা পুলিশের অপরাধ বিভাগের যুগ্ম কমিশনার রূপেশ কুমার। এদিকে জল্পনা বাড়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নিরাপত্তারক্ষীর বক্তব্য। যাদবপুরের ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের যাতায়াত নিয়ে তরজা ছিলই, এবার সেই আগুনে ঘি ঢালল নিরাপত্তারক্ষীর দাবি। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে একটি মেয়ে ছাত্রদের অনামিকার জলে পড়ে যাওয়ার খবর দিতে আসে, যাকে তিনি কোনওদিনই দেখেননি। নিরাপত্তারক্ষীর দাবি, অনামিকার জলে পড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে তারা যখন ঘটনাস্থলে যান, তখন দেখেন, সেখানে আর অন্য কেউ ছিলেন না। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, কে সেই মেয়ে? যিনি অনামিকাকে পড়ে যেতে দেখেন। তিনি কি অনামিকার সঙ্গেই ছিলেন? উঠছে প্রশ্ন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনামিকা মণ্ডলের মৃত্যুর পর কেটে গেছে পাঁচ দিন। এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি কীভাবে মৃত্যু হল বছর একুশের মেয়েটার? এই প্রেক্ষাপটেই জল্পনা বাড়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নিরাপত্তারক্ষী অর্জুন দের বক্তব্য। ১১ বছর ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। কম-বেশি সব পড়ুয়ারই মুখ চেনা। তাঁর দাবি, বৃহস্পতিবার রাতে একটি মেয়ে ছাত্রদের খবর দিতে আসে। যাকে তিনি চিনতেন না। তিনি জানান, ওই 'অপরিচিত' মেয়েটিই ছেলেদের খবর দিতে আসে। তারপর অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এখানেই প্রশ্ন উঠছে, কে সেই মেয়ে? যিনি অনামিকাকে ঝিলে পড়ে যেতে দেখেন, বাকিদের খবর দেন, কীভাবেই বা তিনি জানলেন অনামিকা পড়ে গেছেন? তাহলে কি তিনি অনামিকার সঙ্গেই ছিলেন? তিনি কি আদৌ বিশ্ববিদ্য়ালয়ের কেউ? নাকি বাইরের? এদিকে, পুলিশ সূত্রে খবর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার সময় হেঁটে ঝিলের কাছে শৌচালয়ের দিকে যান তরুণী। তার ১০ থেকে ১২ মিনিটের মধ্যে আরও ৩ জনকে দেখা গেছে সেদিকে যেতে। ছাত্রীর দেহ জলাশয় থেকে তোলা হয়েছে আনুমানিক রাত ১০টা২০ থেকে ১০টা২৫ এর মধ্যে।
নিরাপত্তারক্ষী অর্জুন দে-র দাবি, অনামিকার জলে পড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে তারা যখন ঘটনাস্থলে যান, তখন দেখেন, সেখানে আর অন্য কেউ ছিলেন না। উদ্ধারের পর প্রথমে ১০ মিনিট ধরে চলে শুশ্রূষা। অটো ডাকা হয়। আসে অ্য়াম্বুল্য়ান্স।আশ্চর্যের বিষয় হল, যে জায়গায় এই ঘটনা ঘটেছে সেখানে কোনও সিসিটিভি কভারেজ নেই। নেই পর্যাপ্ত আলোও। ৩টি CCTV ক্য়ামেরার ২টি রয়েছে ৪ নম্বর গেটে। যেখান থেকে কারা ঢুকছে কারা বেরোচ্ছে দেখা সম্ভব। আর একটি রয়েছে UG আটর্স বিল্ডিং-এ। সেখান থেকে ৪ নম্বর গেটে কারা ঢুকছে বেরোচ্ছে দেখা যায়।
এদিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়ের সহ উপাচার্যও স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ঘটনাস্থলের কোনও সিসিটিভি ফুটেজ নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনাক্রম জানতে সোমবার ফের অনামিকা মণ্ডলের ৩ বন্ধুকেতলব করে পুলিশ।