অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা: উজ্জ্বল ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক মেধাবী। সন্তানকে ঘিরে স্বপ্ন দেখেছিলেন বাবা-মা। স্বপ্ন ছিল স্কুলের শিক্ষকদের। শৈশব থেকে যে মেধাবী ছাত্রর বেড়ে ওঠা দেখেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর খবরে গলা ধরে আসে প্রধান শিক্ষককের। 


স্বপ্নদীপ কুণ্ডু। বেড়ে ওঠা বগুলায়। লেখাপড়া বগুলা হাইস্কুলেই ক্লাস ফাইভ থেকে। পড়াশোনা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত।  স্বপ্নদীপের কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের। ছাত্র হিসেবে স্বপ্নদীপ যে ভাল ছিলেন, তা একাধিকবার বলেছেন তিনি। বগুলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, 'বিজ্ঞান বিষয়ে রীতিমতো ভাল ছেলে ছিল ও। তুখোড় ছিল সাহিত্যেও।' 


শুক্রবারই বাড়ি আসার কথা ছিল স্বপ্নদীপের। ছেলেকে আনতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল বাবা-মায়ের। সেই যাওয়া আর হল না। মা-বাবাকে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখানোর কথা ছিল স্বপ্নদীপের। মা ভেবেছিলেন ছেলের জন্য ফল নিয়ে যাবেন। কিন্তু মুহূর্তে সব শেষ। 


পরিবার সূত্রে খবর, গত ৩ তারিখ যাদবপুরে স্বপ্নদীপকে বাংলা অনার্সে ভর্তি করেন বাবা। হস্টেল না মেলায় রবিবার রেখে আসেন হস্টেলের সিনিয়র দাদাদের কাছে। সেই রেখে আসাই শেষ। বুধবার রাত ৯টা নাগাদ মা-বাবার সঙ্গে শেষবার ফোনে কথা হয় তাঁর।


স্বপ্নদীপের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে নদিয়ার হাঁসখালি থানার বগুলা এলাকায় এদিন বিক্ষোভ মিছিল করে স্থানীয় স্কুল ও শ্রীকৃষ্ণ কলেজের ছাত্রছাত্রীরা।                                         


আরও পড়ুন, 'দোষীকে ফাঁসি দিয়ে আমার বুকের জ্বালা মেটান', মুখ্যমন্ত্রীকে করুণ আর্তি স্বপ্নদীপের বাবার


অন্যদিকে, স্বপ্নদীপের মৃত্যুতে আরও জোরাল হল র‍্যাগিং তত্ত্ব। নাম-পরিচয় দেওয়ার নামে ৩ দিনে ২ বার করা হয় হয়রানি। কী ঘটেছিল বুধবার রাতে? কারা অত্যাচার করেছিল তাঁর ওপর? জানতে ধৃত সৌরভ চোধুরী সহ বেশ কয়েকজনকে জেরা করছে পুলিশ। ধৃতের ২২ অগাস্ট পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ আদালতের। 


এই ঘটনায় সৌরভ চৌধুরী নামে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যিনি ২০২২ সালে MSc পাস করে যাওয়ার পরও এক বছর ধরে হস্টেল দখল করে থাকছিলেন। স্বপ্নদীপের বাবার অভিযোগ, তাঁর ছেলের ওপর যে অকথ্য অত্যাচার হয়েছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন এই সৌরভ চৌধুরী। শনিবার তাঁকে ২২ তারিখ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক।