কলকাতা: দলবেঁধে তাঁর কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন বিজেপি (BJP) নেতৃত্ব। সেখানে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ (Post Poll Violence Allegation) নিয়ে নিজেই রাজ্যের বিরুদ্ধে সরব হলেন তিনি। রাজভবনের (Raj Bhavan) অলিন্দ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar)। আর তাতেই ফের একবার বিতর্ক উস্কে দিলেন তিনি। রাজভবনের অলিন্দে বিজেপি নেতাদের টেকে নাটক মঞ্চস্থ করে ধনকড় রাজভবনের ঐতিহ্যকে ধুলোয় মিশিয়ে দিলেন বলে অভিযোগ তৃণমূলের (TMC)। আবার হিংসায় ধনকড় যেখানে রাজ্যের বিরুদ্ধে ভেদাভেদের রাজনীতির অভিযোগ তুলেছেন, বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ সিপিএম-এর (CPM)।
রাজভবনে দরবার বিজেপি-র
ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস সংক্রান্ত অভিযোগের বর্ষপূর্তি ঘিরে মঙ্গলবার বিজেপ-র কর্মসূচি ছিল। তাতে নিহত বিজেপি কর্মীদের পরিবার-পরিজনকে সঙ্গে নিয়ে রাজভবনে বেনজির ভাবে দরবার করে বিজেপি। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের ধর্না মঞ্চ থেকে রাজভবনে গিয়ে স্মারকলিপি দেয় তারা। রাজ্যপালের হাতে নিহতদের নামের তালিকা তুলে দেন সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীরা। প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়ালকে ধরে কাঁদতে দেখা যায় কেতুগ্রামের নিহত বিজেপি কর্মী বলরাম মাঝির মাকে। কেউ কেউ আবার রাজ্যপালের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে সুবিচার চান।
সেখানেই বক্তৃতা করতে গিয়ে রাজ্যকে নিশানা করেন ধনকড়। রাজভবনের অলিন্দ থেকে ধনকড় বলেন, “হিংসা কোনও সমাধান নয়, সমাজের কলঙ্ক। হিংসার তাণ্ডব নৃত্যে রাজ্যকে কলঙ্কিত করেছে। এক বছর পরও তাঁরা যে সাহায্য পাননি, সুবিচার পাননি, এটা চিন্তার বিষয়। এটা দেখে আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। রামপুরহাটের স্বজনহারাদের মতো এদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।”তৃণমূল নেত্রীকে দলগত রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিজেপির নিহত দলীয় কর্মী-সমর্থকদের পরিজনদের জন্য এ দিন রাজভবনের সব গেট খুলে দেওয়া হয়। অন্তত আড়াইশো জন রাজভবনের সামনে জড়ো হন। তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। তাঁর কথায়, “রাজ্যপাল আজ রাজভবনকে বিজেপি-র রঙ্গমঞ্চে পরিণত করেছেন। কাশীপুরের ঘটনায় কম্যান্ডো হাসপাতালের রিপোর্টে সাফ বলা হয়েছে, ঝুলেই মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ আত্মহত্যার তত্ত্বই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। অর্থাৎ রাজনৈতিক হত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করা বিজেপি-র বেলুন চুপসে গিয়েছে। অমিত শাহকে দিয়ে পর্যন্ত মিথ্যা বাল হয়েছে। আজ বিজেপি ওখানে নাটক করতে গিয়েছে। রাজভবনের মতো ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠান কি রাজনৈতিক দলের ধর্না মঞ্চ! রাজ্যপাল জানেন, অপদার্থ বিজেপি নেতাদের দিয়ে কিছু হবে না। চাই নাটক মঞ্চস্থ করে রাজভবনের অলিন্দকে কলুষিত করলেন রাজ্যপাল।“
আরও পড়ুন: Kolkata High Court: লালবাতি ব্যবহার নিয়ে রাজ্যের কাছে হলফনামা চাইল কলকাতা হাইকোর্ট।Bangla News
ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে আগেই আদালতে গিয়েছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা গুরুতর অপরাধগুলি খতিয়ে দেখছে। তার পরেও কেন রাজ্যের কাছে বিচার চাওয়া হচ্ছে, প্রশ্ন তোলেন কুণাল। তাঁর কথায়, “যে কোনও মৃত্যুই দুঃখের। কিন্তু রাজ্যপাল যে এত বড় বড় কথা বলছেন, সিবিআই তদন্ত তো চলছে! সিবিআই তদন্ত করছে। তার পরেও যদি বিচার না পান, তাহলে রাজভবনে দাঁড়িয়ে ছবি না তুলে অমিত শাহের বাড়ির সামনে ধর্নায় বসুন না রাজ্যপাল! এখানে ক্ষতিপূরণ নিয়ে ভেদাভেদের অভিযোগ তুলছেন রাজ্যপাল! উত্তরপ্রদেশের উন্নাও, হাথরস, গোরক্ষপুর, প্রয়াগরাজ এবং সর্বোপরি ঝাঁসির দিকে তাকান! সেখানে নিমন্ত্রণ করতে বেরনো এক মেয়েকে ধর্ষণ করে বিক্রি করা হচ্ছ। বাংলায় ওসব হয় না। কাশীপুর নিয়ে বিজেপি-র মুখোশ খুলে গিয়েছে।“
রাজভবনে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে রাজ্যপালের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও (Sujan Chakraborty)। ভেদাভেদের রাজনীতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে বা পরে , বাংলায় যা ঘটছে, তাতে যে আমাদের মান-সম্মান নষ্ট হচ্ছে, গোটা দেশের সামনে মাথা নীচু হচ্ছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু রাজভবন যদি আমভবনে পরিণত হয়, রাজ্যপাল যদি সেটাই চান, তাহলে কিছু বলার নেই। সরাসরি দেখা করার ক্ষেত্রে রাজ্যপালও কি বাছাবাছি করছেন? এটাও কিন্তু প্রশ্ন।”
রাজ্যকে নিশানা বিজেপি-র
এ দিন মমতার বিরুদ্ধে রক্তের হোলি খেলার অভিযোগ করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, “২১৩-র দম্ভ-অহংকার-ঔদ্ধত্যে, বিরোধী শক্তিকে নিকেশ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে এই বাংলার অত্যাচারী শাসনের যিনি সর্বময়ী কর্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি ভোটের আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে খেলা হবে। তিনি প্রকাশ্যে বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী কতদিন? মঞ্চ থেকে বলেছিলেন, যে কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে গেলে কী হবে? মঞ্চের নীচে থাকা জাহাঙ্গির খান, শওকত মোল্লা, আরাবুল ইসলামরা গোটা পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের, এই রক্তের হোলি খেলার যারা নেতা, তারা নীচ থেকে বলেছিল, দিদি খেলা হবে। সেই খেলা হবার মাসুল দিয়েছে এই শহিদ পরিবারের সদস্যরা।“ বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর ১ বছর কেটে গিয়েছে। মামলা আদালত ঘুরে সিবিআই-এর হাতে উঠেছে। কিন্তু ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস ইস্যুতে রাজনৈতিক তরজা চলছে সমান তালে।