রাজা চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি : জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায় প্রভাবশালী বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হলেও দম্পতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঠিকমতো তদন্ত করছে না পুলিশ (Police)। অভিযোগ ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিজেপি বিধায়ক (BJP MLA) শিখা চট্টোপাধ্যায়ের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Chief Minister Mamata Banerjee) দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারি বিজেপি বিধায়কের। পাল্টা অভিযোগ করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান।

অস্বাভাবিক মৃত্যু, প্রভাবশালী যোগ

জলপাইগুড়ি পুরসভার নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন ও তাঁর স্ত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু। ভাইরাল সুইসাইড নোট ঘিরে চাঞ্চল্য। জোড়া অস্বাভাবিক মৃত্যুর নেপথ্যে কি ৬ বছর আগের শিশুপাচারকাণ্ড ? জেলাজুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে এই প্রশ্ন। গত শনিবার সকালে জলপাইগুড়ির পাণ্ডাপাড়া এলাকায় উদ্ধার হয় পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারপার্সন সুবোধ ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী অপর্ণা ভট্টাচার্যর দেহ। ঘটনার পরে পরই ভাইরাল হয় চারপাতার একটি সুইসাইড নোট। ভাইরাল সুইসাইড নোটের সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ। 

ভাইরাল সুইসাইড নোটে সুবোধ ভট্টাচার্যর স্ত্রী অপর্ণা ভট্টাচার্যর নামে লেখা রয়েছে, ২০১৭ সালে শিশুপাচার চক্রের পর্দাফাঁস করায় তাঁদের দীর্ঘদিন ধরে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছিল। জোর জবরদস্তি নগদে ৫ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়। এমনকি শিশুপাচার চক্রের পর্দাফাঁস করার খেসারত হিসেবে তাঁদের বিরুদ্ধে ২০ লক্ষ টাকায় চাকরি বিক্রির মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীদের দাবিমতো টাকা দিতে না পারায়, জমির দলিল ও ব্ল্যাঙ্ক চেক জমা দিতে হয়েছে। এই চাপের মুখেই তাঁরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি করা হয়েছে সুইসাইড নোটে। পুরো ঘটনায় কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে জলপাইগুড়ি জেলার যুব তৃণমূল সভাপতি, আইনজীবী ও পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায়-সহ চার জনকে। সেই সুইসাইড নোটকে হাতিয়ার করে জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ও যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়-সহ চারজনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করেন ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়। যিনি সম্পর্কে মৃত সুবোধ ভট্টাচার্যর দিদি। 

ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, 'একজন প্রভাবশালী নেতা তথা জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের নামে অভিযোগ হওয়ায় দম্পতি মৃত্যুর তদন্ত পুলিশ ঠিকমতো তদন্ত করছে না। আমরা জানি এখান থেকে আমরা কোনও সুরাহা পাব না, তাই আমাদের রাজ্যের সকলের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি চিঠি দিচ্ছি, তাঁকে কাতর আবেদন জানাব, যাতে আগামীতে আমার ভাই ও তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনার ন্যায্য বিচার পাই। অভিযুক্তরা দিনের আলোয় চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে'। পাল্টা জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, 'শিখা চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও নিয়োগের জন্য মোটা টাকা নেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন, শিখা দেবীকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? শিখা  জানেন দম্পতির মৃত্যুর পিছনে তাঁর অবদান আছে, তাই দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন।  শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় দম্পতি মারা গেলেন, উনি ছ'টায় পৌঁছে গেলেন? অপর্ণা ও স্বামীর মৃত্যুর পিছনে যে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে, তার ৮০ শতাংশের ভাগিদার শিখা চ্যাটার্জী নিজেই।'

২০১৭ সালে জলপাইগুড়ি জেলা নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের চেয়ারপার্সন পদে ছিলেন সুবোধ ভট্টাচার্য। তাঁর কার্যকালেই জেলায় বড় শিশুপাচারচক্রের পর্দাফাঁস হয়। তৎকালীন CWC চেয়ারপার্সন সুবোধ ভট্টাচার্যই বিষয়টি রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরে জানিয়েছিলেন। সস্ত্রীক ওই ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে দানা বাঁধছে রহস্য।

আরও পড়ুন- টাকা নিয়ে চাকরির নামে প্রতারণার অভিযোগ খোদ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে