জলপাইগুড়ি: সাধারণ মানুষের দুয়ারে পৌঁছে গিয়েছে সরকারা। রেশনের চাল-ডাল তুলতেও আজ বাজার যেতে হয় না। মন-পসন্দ খাবারও এসে পৌঁছে যায় দুয়ারে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বাড়ির দুয়ার পর্যন্ত প্রিয়জনের মৃতদেহ নিয়ে যেতে হয় কাঁধে তুলেই। বৃহস্পতিবার বাংলার আর এক দিক এভাবেই দেখলেন সাধারণ মানুষ। তা নিয়ে নিন্দার ঝড় বইছে সর্বত্র। অবধারিত ভাবে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য সরাসরি রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন বিরোধীরা।
বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের বাইরে মায়ের দেহ কাঁধে নিয়ে ছেলের হেঁটে যাওয়ার ছবি সামনে আসতেই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে সরাসরি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, "অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ঘটনা। সকালেই দেখেছি আমি। ২০০ শতাংশ কাজ হয়েছে বলা মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা স্বীকার করা উচিত। লজ্জা রাখার জায়গা নেই।"
শুধু শুভেন্দুই নন, এ দিন রাজ্যকে একযোগে নিশানা করেছে সিপিএম এবং কংগ্রেসও। সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "জলপাইগুড়ি থেকে যে ছবি উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। জলপাইগুড়ি প্রায় কালাহান্ডি হয়ে গেল। ৩ হাজার টাকা দিতে পারেনি, অতএব শব কাঁধে ছেলে চলেছে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরের বাড়ির উদ্দেশে! কোথায় প্রশাসন, কোথায় কী! টাকা দিতে পারেনি বলে মায়ের দেহ কাঁধে নিয়ে হাঁটতে হবে বাংলায়! কালাহান্ডি দুর্ভিক্ষের জায়গা। ডানা মাঝি নাম ছিল সেই ব্যক্তির। তাতে শিউড়ে উঠেছিল গোটা দেশ। এত মর্মান্তিক চেহারা আমাদের জলপাইগুড়ির!"
মমতাকে নিশানা করে সুজন বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর তো বলছিলেন যে, সব ব্যস্থা রয়েছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। টাকা দিতে পারল না বলে কোনও ব্যবস্থা থাকবে না! সরকারি হাসপাতালের কী মর্মান্তিক, বীভৎস চেহারা! বাংলার গ্রামের পরিস্থিতি প্রকট হয়ে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বোধহয় কোনও উৎসবে রয়েছেন। টের পাবেন কিনা জানি না। উনি কিনা স্বাস্থ্য মন্ত্রী! ভাবা যায় না। রোজ সরকার যে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলে, 'জন্ম-মৃত্যু সব করে দিলাম', তার পর এমন দৃশ্য মানা যায় না। বয়াবহ পরিস্থিতি বাংলার।"
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর কথায়, "সব হাসপাতালে এই কারচুপি রয়েছে। রক্ত নিয়ে, অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া নিয়ে, ওষুধ নিয়ে দুর্নীতি চলছে দেদার। যে ওষুধ হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়, তাতে কাজ হয় না। হাসপাতালের দেওয়া ওষুধে রোগ সারে না, কিন্তু ব্র্যান্ডেড ওষুধ খেলে সেরে যায় রোগ। এই চলছে। লুঠতরাজ চলছে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে।"