রাজা চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি: ভিন্ রাজ্যে আগেও চোখে পড়েছে এমন দৃশ্য। এ বার জলপাইগুড়ি থেকে উঠে এল মর্মান্তিক দৃশ্য (Jalpaiguri News)। টাকার অভাবে শববাহী গাড়ি জোগাড় করতে পারেননি (Man Carrying Mother's Dead Body)। তার জন্য মায়ের দেহ কাঁধে তুলেই রওনা দিলেন ছেলে। জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সামনে ধরা পড়ল এই মর্মান্তিক ছবি (District News)।
মায়ের দেহ কাঁধে তুলেই রওনা দিলেন ছেলে
অথচ যে সময়ে এই দৃশ্য ধরা পড়ে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়, সেই সময় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সামনে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল অ্যাম্বুল্যান্স। কিন্তু মৃতার ছেলের দাবি, মায়ের দেহ নিয়ে যেতে তাঁর কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা দাবি করা হয়। তা দিতে পারেননি তিনি। তাই কাপড়ে মোড়া মায়ের দেহ কাঁধে তুলে নিয়ে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
মৃতার ছেলে জানিয়েছেন, শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয় মায়ের। তাতে বুধবার রাতে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে মাকে ভর্তি করেন তিনি। কিন্তু বাঁচানো যায়নি মাকে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় মারা যান তাঁর মা। মায়ের দেহ নিয়ে যেতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান তিনি। কিন্তু লাভ হয়নি।
এর পর হাসপাতালের বাইরে যে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা রয়েছে, টাকার বিনিময়ে সেখান থেকে গাড়ি পাওয়া যায়। কিন্তু যোগাযোগ করলে ৩ হাজার টাকা চাওয়া হয় তাঁর কাছে, যা দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না তাঁর। উপায় না দেখে তাই মায়ের দেহ কাঁধে তুলেই রওনা দেন তিনি। নগরডাঙা এলাকায় বাড়ির পথে রওনা দেন ওই ব্যক্তি। মাঝে কাঁধ থেকে দেহ নামিয়ে মুহূর্তের জন্য শ্বাস নিতেও দেখা যায় তাঁকে।
হাসপাতালের বাইরে এমন দৃশ্য চাউর হতে সময় লাগেনি। বিষয়টি কানে পৌঁছয় এলাকার একটি সমাজসেবা সংগঠনের। ওই সংস্থার তরফেই পরে ওই ব্যক্তিকে গাড়ির ব্য়বস্থা করে দেওয়া হয়। হাসপাতালের সুপার জানিয়েছেন, মৃতার ছেলের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। ৩ হাজার টাকা চাওয়া হয় বলে জানতে পেরেছেন তিনি।
কিন্তু গতকাল রাতে ৯০০ টাকা দিয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তির পরও ন্যূনতম সহযোগিতা মিলল না কেন, প্রশ্ন উঠছে। হাসপাতালের সুপার জানিয়েছেন, যাঁরা এই কাজ করেছেন, অত্যন্ত অমানবিক কাজ করেছেন। হাসপাতালের কর্মী এবং নিরাপত্তারক্ষীদের নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কেন ওই ব্যক্তি গাড়ি পেলেন না, জবাবদিহি করেছেন তিনি। পরবর্তী সময়ে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, সকলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল এবং বাইরের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা, কোনওটিই মেলেনি বলে অভিযোগ
যদিও হাসপাতালের বাইরের ওই অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি তাঁদের কাছে এলে একজন ৩ হাজার টাকা দাবি করেন। তিনি অপারগ জানায় তাঁকে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু অপেক্ষা না করে মায়ের দেহ কাঁধে তুলে বেরিয়ে পড়েন তিনি। এমনকি হাসপাতালে বিনামূল্যে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার ব্যবস্থা রয়েছে। ওই ব্যক্তি সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি বলেও অভিযোগ উঠছে।