জলপাইগুড়ি: প্রতিমা বিসর্জনের সময় হঠাৎই জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) মালবাজারের মাল নদীতে হড়পা বান ( Harpa Ban incident)। জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে এখনও পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ আরও অনেকে। আশঙ্কা, আরও বাড়তে পারে মৃতের সংখ্যা। তবে এই ভয়াবহ হড়পা বানের সময় নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ১০ জনকে বাঁচিয়ে ছিলেন যিনি, তাঁর নাম মহম্মদ মানিক। ওই ১০ জনের মধ্যে ছোট শিশুও ছিল। আর এবার এবিপি আনন্দের কাছে তিনি সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। 


আমি তো দেখেছি, প্রশাসন কাজ করেছে: মহম্মদ মানিক


মহম্মদ মানিক বলেন,  আমি নদীতে ঠাকুর ভাসান দেখার জন্য গিয়েছিলাম। আমি পৌঁছানোর একমিনিট পরে দেখি নদীর জল বেড়ে লোকজন ভেসে যাচ্ছে।  তৎক্ষণাৎ ওখানে আমার এক বন্ধু ছিল, ওকে মোবাইল ফোন দিয়ে, আমি নদীতে ঝাপ দিয়ে, ১০ জনকে সাইডে নিয়ে যাই। উদ্ধার করি। উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে শিশু ছিল, মহিলা ছিল, পুলিশও ছিল। পাশাপাশি তিনি জানালেন, ভয়াবহ সেই দৃশ্য মনে আসছে বারবার, যার জন্য তিনি ঠিক মতো ভাতও খেতে পারছেন না। তবে এর আগে মাল নদী এরকম হড়পা বান তিনি দেখেননি বলে দাবি করেছেন। আমি তো দেখেছি, প্রশাসনও কাজ করেছে। ফায়ারব্রিগেডও কাজ করেছে। তারা লোককে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে। সিভিল ডিফেন্সের লোক ছিল, কিন্তু কোনও নৌকা আমার চোখে পড়েনি।  আমার চোখের লোক ভেসে যাচ্ছে, আমি সেই দৃশ্য দেখে থেমে থাকতে পারিনি, নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার কারণ জানালেন তিনি।


বিসর্জনের সময় ৮ জন সিভিল ডিফেন্সের কর্মী ছিলেন ঘটনাস্থলে


স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, মৃতদের মধ্যে ১০ বছরের এক বালিকা রয়েছে।  মাঝরাত পর্যন্ত চলে উদ্ধারকাজ। তারপর প্রবল বৃষ্টির জেরে উদ্ধারকাজ সাময়িক বন্ধ হয়। আজ সকালে নদীর বিভিন্ন অংশে চালানো হবে তল্লাশি। পুলিশ সূত্রে খবর, ৭০টি প্রতিমা বিসর্জনের জন্য আনা হয়েছিল। তার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০টি প্রতিমা বিসর্জনের পরই বিপর্যয় ঘটে। জলপাইগুড়ির মাল নদীতে গতকাল প্রতিমা বিসর্জনের সময় ৮ জন সিভিল ডিফেন্সের কর্মী ছিলেন ঘটনাস্থলে। সিভিল ডিফেন্সের এক কর্মী জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে দড়ি ছাড়া কিছু ছিল না। বিপর্যয় যখন ঘটে, তখন যদি সিভিল ডিফেন্সের আরও কর্মী থাকতেন, তাহলে দ্রুত উদ্ধারকাজ করা যেত বলে তাঁর দাবি। 


আরও পড়ুন, 'বিপর্যয়ের ক্ষতিপূরণ ১০ লক্ষ টাকা হওয়া উচিত', 'মাননীয়া'-কে একাধিক প্রশ্ন শুভেন্দুর  


এই বিপর্যয় নিয়ে স্থানীয় সূত্রে একটা সম্ভাবনার কথাও বলা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে দাবি, নদীখাতে আগেই বোল্ডার ফেলা হয়েছিল, যাতে, যেদিকে বিসর্জন হবে, সেদিকে বেশি জল থাকে। হড়পা বানের সময় তা হিতে বিপরীত হয়েছে।  যেখানে বিসর্জন হচ্ছিল, সেদিকেই প্রবল স্ত্রোত এসে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। কয়েকদিন আগেই এই নদীতে হড়পা বান হয়। তারপরও কেন বিসর্জনের সময় বাড়তি প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্ন উঠছে।