রাজা চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি: বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে ভিতরে ঘন জঙ্গল। কিন্তু খানিক ভিতরে ঢুকলেই চোখ কপালে উঠবে। দেখা মিলবে আসল চেহারার। যথেচ্ছভাবে কাটা হচ্ছে গাছ। নির্বিচারে। এদিক-ওদিক পড়ে আছে গাছের গুঁড়ি। পর্যটকদের একান্ত প্রিয় ডুয়ার্সে ক্রমশ এভাবেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে জঙ্গল।
ডুয়ার্সের মরাঘাট থেকে নাথুয়া, বানারহাট রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকার জঙ্গলের এখন এমনই ছবি। পরিবেশ প্রেমীদের অভিযোগ, অবাধে চলছে গাছ পাচার। ডুয়ার্সের জঙ্গল থেকে শাল, সেগুনের মতো মূল্যবান গাছ কেটে দিনেদুপুরে পাচার করা হচ্ছে। অথচ এই ব্যাপারে একেবারেই নিষ্ক্রিয় বন দফতর।
ডুয়ার্সের পরিবেশপ্রেমী নফসর আলির কথায়, 'সর্ষের মধ্যেই তো আসল ভূত। ডুয়ার্সের জঙ্গলের ভেতর থেকে কাঠ কাটা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার। আজকে এখানে তো কাল ওখানে গাছ কাটছে। আজ চোর ধরা পড়ছে তো কালই পালাচ্ছে। বন দফতর কী ডিউটি করছে? মূল্যবান কাঠ কাটছে, আপনারা কী করছেন?' মালিকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার দাবি করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: West Medinipur: কুকুরের পায়ে বেঁধে দেওয়া হল শব্দবাজি, বিস্ফোরণে অঙ্গহানি পোষ্যর
সমস্যার সমস্ত অভিযোগ মেনে নিলেও, বন দফতরের দাবি, জঙ্গল রক্ষায় সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। ডুয়ার্সের মরাঘাট রেঞ্জের রেঞ্জার রাজকুমার পাল জানান, 'আমরা ও পুলিশ চেষ্টা করছি। হলদিবাড়িতে এই অপারেশনের মাথা যারা রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। চেষ্টা করছি দ্রুত সমস্যা সমাধানের। অসাধু ব্যবসায়ীরা এই কাঠ কিনছে। গরিব মানুষদের বোকা বানিয়ে ফাঁসানো হচ্ছে, যাঁরা কিছুই বোঝেন না। কিন্তু নজরদারির জন্যও কর্মী কম রয়েছে।'
গত সেপ্টেম্বর মাসে, বন দফতর, এসএসবি এবং পুলিশের যৌথ দল, ডুয়ার্সের বানারহাটের তেলিপাড়া, হলদিপাড়া, মরাঘাট এলাকা থেকে প্রচুর বেআইনিভাবে মজুত কাঠ উদ্ধার করে। কিন্তু কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। জলপাইগুড়ি ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কনজারভেটর অফ ফরেস্ট বিপাশা পারুলের কথায়, 'মাঝেমধ্যেই এরকম হচ্ছে। খবর পেলে তৎক্ষণাৎ যাচ্ছি। এফআইআর করা হচ্ছে। তদন্ত করছি আমরা।'
যদিও সমস্যা রয়ে গেছে জঙ্গল রক্ষার পরিকাঠামোতেই। বন দফতর সূত্রে খবর, ডুয়ার্সের সমস্ত রেঞ্জে যথেষ্ট সংখ্যক বনকর্মী নেই। অভাব রয়েছে পর্যাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্রর। ফলে অবস্থা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়েছে।