বিশ্বজিৎ দাস, পশ্চিম মেদিনীপুর: খড়গপুরে একটি কুকুরের পায়ে শব্দবাজি বেঁধে দেওয়ায়, তার অঙ্গহানির অভিযোগ উঠেছে। এমনিতেই আদালতের নির্দেশিকাকে অবমাননা করে দেদারে ফাটছে বাজি। কিন্তু সেই বাজি কেড়ে নিল এক নিরীহ পশুর পা। খড়গপুরের ছবিটি এতটাই ভয়ঙ্কর। কুকুরের পায়ে শব্দবাজি ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কুকুরটির পিছনের বাঁ পা এবং লেজের কিছু অংশ উড়ে গিয়েছে বিস্ফোরণের তীব্রতায়। 


মানুষ যে কতটা নৃশংস হতে পারে, তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে খড়গপুর শহরের খড়িদা এলাকার ঘটনা। জানা যায়, এক কুকুরের পায়ে শব্দবাজি বেঁধে ফাটিয়ে দেয় আর তাতেই একটি পা উড়ে যায় ওই কুকুরের । ক্ষতবিক্ষত হয় গোটা শরীর এর পরেই পশুপ্রেমীরা এসে ওই পুকুরের চিকিৎসা চালাচ্ছে।  কিন্তু কে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর শহরের খরিদা  এলাকায়। বাজি ফাটাতে গিয়ে এইভাবে কুকুরের উপরে হামলা নিন্দার ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় পশুপ্রেমীদের অভিযোগ যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে অবিলম্বে খড়গপুর টাউন থানার পুলিশ তাঁদের খুঁজে অবিলম্বে গ্রেফতার করে।


এই ঘটনা পুলিশকে জানানো পর পুলিশ কুকুরটিকে দেখতে যায় এবং ওই এলাকার তদন্ত করে নয় জনকে আটক করেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। কুকুরের মালিক কুশয়ান্ত তেওয়ারি বলেন, কুকুরের বাদিকের পা একেবারে নেই। মুখের সামনে বড় ফুটো। কিছু ছেলে ওর পায়ে বোম বেঁধে দিয়েছিল সেই কারণে ওর পা নষ্ট হয়ে গেছে। যেখানে ঘটনাটা ঘটেছে তারাই একথা বলেছেন। যারা এই কাজ করেছে তাদের ব্যাপারে জানতে পারলে পুলিশকে জানাব।


আরও পড়ুন, লন্ডনেও 'জয় জগন্নাথ', পুরীর আদলে মন্দির তৈরি হতে চলেছে টেমসের পাড়ে


একটি পশুপ্রেমী সংগঠনের উদ্যোগে জখম কুকুরটির চিকিৎসা চলছে। পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনায় ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। পশুপ্রেমী সংস্থার এক সদস্য কমলজিৎ সিং বলেন, আমার কাছে গত ৩ তারিখ ফোন আসে। কিন্তু আমি ব্যস্ত থাকার জন্য সেদিন যেতে পারিনি। আমি চার তারিখে গিয়ে দেখি, তখন কুকুরের পা চামড়ার মধ্যে ঝুলছিল। তারপর পা কেটে ওষুধ দেওয়া হয়। কুকুরটি যাদের বাড়িতে ছিল পুলিশ তাদের বাড়িতে যায়। ওই এলাকার মানুষের থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ঘটনার ব্যাপারে। পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি যে এই কাজ করেছে তার যাতে জেল হয়। কুকুরকে এখন আমাদের এনজিওতে নিয়ে এসে আমরা চিকিৎসা করছি। খাওয়া-দাওয়া দিয়েছি।" 


খড়গপুর পৌরসভার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর প্রদীপ সরকার বলেন, এটা অমানবিক কাজ, ন্যক্কারজনক কাজ। যে এই কাজ করেছে তার বিরুদ্ধে অভিলম্বে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আমরা পুলিশকে জানিয়েছি যারা এই ধরনের ঘৃণ্য মানসিকতার কাজ করেছে। তাদেরকে গ্রেফতার করে কড়া শাস্তি দেয়া হোক।


খড়গপুর সদরের বিজেপির বিধায়ক হিরণময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। যারা এই কাজ করেছে তাদের মানুষ বলে বলা যায়না। তাদেরকে মানুষ হিসেবে সম্মান দেওয়া কারো উচিত নয়। বাজি ফাটানো তো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তারপরে সুপ্রিম কোর্ট অর্ডার দিয়েছিলেন, কিন্তু এইভাবে এক পশুর পাইপেনে দিয়ে যে নির্মমভাবে ঘটনা ঘটেছে তার ধিক্কার জানাই। যারাই কাজ করেছেন, তাদের পুলিশ খুঁজে বার করবে। সেরকম আইন করা উচিত, এসব মানুষকে সারা জীবন কারাদণ্ড দেয়া উচিত। যতক্ষণ না মানুষ নিজে সচেতন হবে এবং মানুষ নিজেরা এগিয়ে আসবে ততক্ষণ সমাজের পরিবর্তন হবে না।