কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা : ' এ বছর গোড়ার দিকেও একটা গর্বের দিক ছিল যে, মোদির শক্তির সঙ্গে লড়াই করতে পারে যে, তার প্রতিনিধি আমি। পার্লামেন্টে বুকের ছাতি ফুলিয়ে ঘুরতাম। এখনও ঘুরতে পারি। তবে, একটা কমপ্লেক্স লাগে। লোকে যেভাবে দেখে, টিপ্পনি কাটে, খারাপ লাগে। মধ্যবিত্ত বাড়িতে বড় হয়েছি তো! ' এবার বিস্ফোরক তৃণমূল সাংসদ এবং প্রাক্তন IAS অফিসার জহর সরকার।
বিস্ফোরক মন্তব্য জহর সরকারের
দুর্নীতি ইস্যুতে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তৃণমূল সাংসদ জহর সরকার। IAS অফিসার হিসাবে একের পর প্রশাসনের একের পর এক গুরু দায়িত্ব দায়িত্ব সামলানোর পর, গতবছর প্রথম সংসদে পা রাখেন জহর সরকার। প্রসার ভারতীর প্রাক্তন CEO’কে গতবছর রাজ্যসভায় পাঠায় তৃণমূল।
'এমন দুর্নীতির সিন টিভিতে কম দেখা যায়'
বিভিন্ন ইস্যুতে তৃণমূলের পাশেই ছিলেন জহর সরকার। বারবার সরব হয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। কিন্তু এবার তিনি ' অস্বস্তিতে ' নিজের দলের কোনও কোনও নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা একের পর এক অভিযোগে। গত কয়েক মাসে একে একে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার। দুর্নীতির ভুরি ভুরি অভিযোগ! বারবার ধৃত হেভিওয়েটদের উদ্দেশে চোর কটূক্তি,চোর স্লোগান, আর এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর তিনি যে স্পষ্টতই ক্ষুব্ধ ও হতাশ, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রাক্তন এই দুঁদে আমলা। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দু’টো ফ্ল্যাট থেকে টাকার পাহাড় উদ্ধার করেছে ইডি। যার মোট অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ কোটি। সেই সঙ্গে উদ্ধার হয়েছে আরও কয়েক কোটি টাকার গয়না। এই প্রেক্ষাপটে এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দুর্নীতি ইস্যুতে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন জহর সরকার। তিনি বলেন, 'যখন টিভিতে দেখলাম বিশ্বাসই করতে পারিনি। কারও বাড়ি থেকে এতো টাকা বেরোতে পারে! কল্পনার অতীত। এমন দুর্নীতির সিন টিভিতে কম দেখা যায়।'
' বান্ধবীর নামে ফ্ল্যাট কিনবো, মানা যায় না '
তিনি আরও বলেন, 'রাজনীতির কায়দা আমি বুঝি না। আমার আবেদন থাকবে, যারা ধরা পড়ছে, যারা ধরা পড়তে পারে , যারা দুর্নীতিগ্রস্ত, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। একুশের সময় বলেছিলেন, কাটমানির কথা। অনেকে ফেরত দিয়েছে। আমাদের সেই নীতি মানতেই হবে। রাজনীতির নামে টাকা বানাবো। বান্ধবীর নামে ফ্ল্যাট কিনবো, মানা যায় না। পার্থকে আমি চিনি। কিন্তু বিশ্বাস করতেই পারছি না। দুর্নীতির টাকা দিয়ে এ ভাবে অলঙ্কৃত করা, কেমন গা শিরশির করে। '
এবিপি আনন্দ-কে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ' পার্টির মধ্যে আমাদের কথা হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন ছিল, আপনারা এসব জানতেন না? অনেকে বলেছেন, আমরা বিষয়টি জানতাম না! পার্টির মধ্যে বেশি থাকি না। বেশি ডাকেও না। বলে শুধু বক্তব্যের জন্য। সেখানেও চেপে দেওয়ার একটা চেষ্টা করে! আমি নিজে প্রতি মাসে চিন্তা করি যে, ছেড়ে দিতে পারি। কিন্তু, ছেড়ে দিলে কি উপকার হবে? টাকার জন্য তো আমি রাজনীতিতে আসিনি! আত্মসম্মান যদি না রাখতে পারি, ছেড়ে দেবো! '
এভাবেই দুর্নীতি ইস্যুতে তৃণমূলের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছেন জহর সরকার। তবে পার্টির তরফে জহর সরকারের মন্তব্যে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।