কলকাতা: রেশন দুর্নীতি মামলায় (Ration Scam) গ্রেফতার হন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (Jyotipriya Mallick)। তারপর আদালতে ইডি হেফাজতের নির্দেশ পেয়েই জ্ঞ্যান হারিয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী। তারপরই গোটা বাংলা দেখেছিল, তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। এদিকে সেইসময় শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল জানতেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর প্রেসিডেন্সি জেলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্যের পড়শি হন তিনি। তবে শেষ অবধি পাওয়া খবরে, এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি জেল হেফাজতে থাকা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এসএসকেএম সূত্রে খবর, রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত মন্ত্রীর একাধিক সমস্যা রয়েছে। তাঁর চিকিৎসার জন্য় তৈরি করা হয়েছে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিক্যাল বোর্ড। ধৃত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে দেখে গিয়েছেন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা।
তবে এই মামলাই শুধু নয়, আরও একাধিক মামলায় অতীতে বারবার এসএসকেম-এ ভর্তি হতে দেখা গিয়েছে রাজ্যে হেভিওয়েট নেতা মন্ত্রীদের। এই মুহূর্তে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত কালীঘাটের কাকু সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রও এসএসকেম-এ ভর্তি। যার দরুণ তদন্তের স্বার্থে বহুদিন ধরে চেয়েও , তাঁর ভয়েস রেকর্ড করতে অনুমতি পাননি কেন্দ্রীয় তদন্তকারীর দল। এরআগে গতবছর গ্রেফতারির আগে গরুপাচার মামলায় একধিকবার তলবের আগে হাসপাতালে যেতে দেখা গিয়েছিল অনুব্রত মন্ডলকে। পাশাপাশি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একই পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও। গ্রেফতারির পর তিনিও অসুস্থ হয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছিল। আরও একটু পিছনে ফিরলে দেখা যায়, অতীতে নারদ মামলার ক্ষেত্রেও একই ছবি উঠে এসেছিল। ফিরহাদ হাকিম ব্যাতীত মদন, শোভন, সুব্রত (প্রয়াত) প্রায় প্রত্যেকেই উডবার্ণে ভর্তি হয়েছিলেন।
খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রেশন দুর্নীতি নিয়ে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক!রেশন ব্যবস্থায় যে দুর্নীতি হচ্ছে, সেরকম একাধিক অভিযোগ এসেছিল তাঁর কাছে!সূত্রের দাবি, বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে জমা দেওয়া রিপোর্টে এমনই বিস্ফোরক দাবি করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। আর এখানেই প্রশ্ন জোরাল হচ্ছে,তাহলে কি সব জেনেশুনেও কোনও ব্যবস্থা নেননি প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী?
ইডি সূত্রে দাবি, এ বিষয়ে রেশন দুর্নীতি মামলায় পুলিশের করা FIR-কে ঢাল করতে চাইছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। আদালতে জমা দেওয়া রিপোর্টে গোটা বিষয়ে একাধিক বিস্ফোরক দাবি করা হয়েছে।
ইডি সূত্রে দাবি, আদালতে জমা দেওয়া রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে,জেরার সময় প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, রেশন দুর্নীতি নিয়ে যে একাধিক অভিযোগ উঠেছিল, সেই বিষয়ে তিনি কিছু জানতেন কিনা। ইডি সূত্রে দাবি, তাতে সম্মতি জানান জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছিল। বিষয়টা তাঁর জানা ছিল। ইডির অফিসাররা প্রশ্ন করেন, সব জানার পরও, তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি বা তাঁর খাদ্য দফতর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন? ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য তাঁর ওপর কি কোনও চাপ ছিল?
আরও পড়ুন, চাকা ফেটে বিপত্তি, বাঁকুড়ায় মুখোমুখি সংঘর্ষ বাস ও ভ্যানের, আহত ২০
সূত্রের দাবি, উত্তরে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, পুলিশ তদন্ত করছিল বলেই, খাদ্য দফতর আর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু, রেশন দুর্নীতিতে পুলিশের তদন্ত নিয়েও ইতিমধ্য়েই বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে। ২০১১ থেকে ১০ বছর রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেইসময় রেশনে দুর্নীতির অভিযোগে নদিয়া, কলকাতার একাধিক থানায় FIR করা হয়। কিন্তু সূত্রের দাবি, ইডির তদন্তকারীরা মনে করছেন, সেই তদন্ত ঠিকঠাক করে করা হয়নি! রেশন দুর্নীতির কোনও মাথাকে গ্রেফতারও করেনি পুলিশ।