মুন্না আগার‌ওয়াল, বালুরঘাট : করোনার কোপ এবার পড়ল বালুরঘাটের ঐতিহ্যবাহী বুড়া মাকালী মন্দিরের পুজোয়। করোনা আবহের জেরে এবারে দীপান্বিতা অমাবস্যায়  শুধু শাস্ত্রীয় মতে পুজো অনুষ্ঠিত হবে বুড়াকালী মন্দিরে। পুজোর সময় মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন না দর্শনার্থীরা। পুজোর ভোগ ও প্রসাদ বিতরণের অনুষ্ঠান পুরোপুরিভাবে বানচাল করা হয়েছে। সমস্ত পুজো  বাড়িতে বসেই টিভি বা ফোনে দেখতে হবে ভক্তদের। এছাড়াও পুজোর দিনগুলিতে যাতে মন্দির চত্বরে ভিড় না হয় তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বালুরঘাট বুড়া কালী পূজা সমিতির বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে কমিটির সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী ও মহকুমা শাসক বিশ্বরঞ্জন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন।


প্রতি বছর দীপান্বিতা অমাবস্যায় ঘটা করে পুজোর আয়োজন করা হয় বালুরঘাট বুড়াকালী মন্দিরে। কথিত আছে যে, কয়েকশো বছর আগে বর্তমান বালুরঘাট বুড়াকালী মাতার মন্দিরের পাশ দিয়ে নাকি আত্রেয়ী নদী বয়ে যেত। যদিও বর্তমানে বুড়াকালী মন্দির থেকে কালের নিয়মে অনেকটা পশ্চিমে চলে গিয়েছে আত্রেয়ী নদী। 


লোক মুখে শোনা যায়, মন্দির ও এখনকার বাজারের জায়গায় তখন ছিল ঘন জঙ্গল। শতাব্দী প্রাচীন এই পুজোর সঠিক বয়স কত তা কেউ বলতে পারে না। এক সময় আত্রেয়ী নদীর ধারে নিজে থেকেই নাকি ভেসে ওঠে বুড়া কালী মাতার বিগ্রহ। এক তান্ত্রিক সেই সময় ওই বিগ্রহকে তুলে নিয়ে এসে নিয়ম মেনে পুজো দেন। তার পর থেকেই এই পুজো শুরু হয় বলে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস। প্রথম পর্যায়ে টিনের ঘেরা দিয়ে বুড়াকালী মাতার পুজো শুরু হয়। বর্তমানে বিশাল আকার মন্দিরে পুজিত হন বুড়াকালী মাতা। পুজোর দিন মায়ের প্রতিমা সোনা থেকে রূপার অলঙ্কারে সুসজ্জিত থাকে। বিগত বছরগুলোতে পুজোর দিন কয়েক হাজার ভক্তের সমাগম হত মন্দির চত্বরে। 


এই পুজোয় এখনও পাঁঠা বলি, শোল মাছ বলির প্রথা রয়েছে। তবে জনশ্রুতি আছে, আগে ২০ কিলো ওজনের শোল মাছ বলি দেওয়া হত এই পুজোতে। এই পুজোর দিন শুধু দক্ষিণ দিনাজপুরবাসী নয়, পাশের জেলা উত্তর দিনাজপুর ও মালদা জেলা থেকেও প্রচুর ভক্ত বা দর্শনার্থী আসেন।


আবার জনশ্রুতি আছে, একটা সময় নাকি কলকাতার রানি রাসমণি এই মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন। বজরা নৌকায় চেপে তিনি আত্রেয়ী নদী থেকে জল নিয়ে এসে মায়ের পুজো দিয়ে আবার ফিরে যেতেন কলকাতায়। তবে এর সত্যতা এখনও প্রমাণিত হয়নি। এই মন্দির ঘিরে আরও জনশ্রুতি আছে, সন্ধ্যের পর নাকি অপরূপ ফুলের সুগন্ধি পাওয়া যেত এই এলাকা থেকে। কিন্তু কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত জঙ্গলে কোনও ফুলের গাছপালা নাকি ছিল না। শোনা যেত, নূপুরের আওয়াজ। আজও অত্যন্ত বিশ্বাস ও মান্যতার সঙ্গে পুজিত হন মা। পুজোর দিন দর্শনার্থীদের দেওয়া হয় অন্ন ভোগ। তবে এবার করোনার জন্য ধুমধাম করে পুজো করা হবে না। এমনকী মন্দির চত্বরে ভিড় পর্যন্ত করা যাবে না। এই নিয়ে ইতিমধ্যে বুড়াকালী পূজা সমিতির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।