রাজা চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি: লম্বা জাতীয় সড়ক চলে গিয়েছে। ঠিক তার পাশেই রয়েছে প্রাচীন এই মন্দির। বাংলার তথা উত্তরবঙ্গের শিকড়ের সঙ্গে যার যোগ। নাম দেবী চৌধুরানির মন্দির।


বলা হয়ে থাকে, তিনশোর বছরেরও বেশি আগে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভবানী পাঠক। সেই মন্দিরে এখনও প্রথা মেনে হয় কালীপুজো। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পুজোর প্রস্তুতি প্রায় শেষ। সারা রাত ধরে চলবে পুজো। প্রথমে মূল পুজো হবে, তারপর হবে বলি, মায়ের ভোগে থাকছে সাদা ভাত, পাঁচ রকম ভাজা, তার সঙ্গে থাকছে শাক ভাজা, শোল মাছ, পায়েস, চাটনি, মিষ্টি।


লোককথার আনাচ-কানাচ:
বলা হয়ে থাকে এই পুজো শুরু করেছিলেন ভবানী পাঠক। তিনশো বছর আগে জলপাইগুড়ির এই বৈকুন্ঠপুর এবং রংপুর এলাকায় থাকতেন তিনি এবং তাঁর সঙ্গীরা। তখন এই চত্বর ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা। তাহলে দেবী চৌধুরানির পুজো বলে কেন ডাকা হয় একে? তার পিছনেও রয়েছে একটি কাহিনী। দেবী চৌধুরানী ছিলেন অধুনা বাংলাদেশের জমিদার বংশের মেয়ে। বিয়ের পর পুত্রবধূ হিসেবে মানেনি শ্বশুরবাড়ির পরিবার। সেই রাতেই নাকি তিনি শ্বশুরবাড়ি ছাড়েন। চলে আসেন এই ভবানী পাঠকের মন্দিরে। ভবানী পাঠক তাঁকে কন্যার মর্যাদায় আশ্রয় দেন। তারপর ভবানী পাঠকের কাছেই অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন দেবী চৌধুরানি। ব্রিটিশ শাসকের অত্যাচারে বিরুদ্ধে লড়াইও করেছিলেন তিনি। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবী চৌধুরানি উপন্যাসে এই বিষয়টি রয়েছে। কথিত রয়েছে লুটপাটের সামগ্রী এনে মন্দিরের মুর্তির নীচে সুরঙ্গ তৈরি করে রাখা হতো।  মন্দিরের পাশের করলা নদীর ধারে রাখা থাকতো বজরা।


কথিত রয়েছে দেবী চৌধুরানীর নাকি শোল মাছ খুব পছন্দের ছিল। আজও শোল মাছ দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয় জলপাইগুড়ির গোশালা মোড়ের দেবী চৌধুরানী শ্মশান কালীর মন্দিরে। মন্দিরের প্রথম পুরোহিত ছিলেন ভবানী পাঠক, ভবানী পাঠকের পরে এই মন্দিরের পুরোহিতের তালিকায় নাম উল্লেখ আছে নয়ন কাপালিকের। এখনও কালী পুজোর রাতে পাঠা বলি হয় দেবী চৌধুরানী কালী মন্দিরে। এখন এই মন্দিরের পুরোহিতের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন সুভাষ চৌধুরী। তিনি জানান, নিত্য পুজোর পাশাপাশি কালী পুজোর রাতে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। সেখানে ডাল, ভাত, তরকারির, পাঁচ রকমের ভাজার পাশাপাশি দেবী চৌধুরানীর  প্রিয় শোল, বোয়ালমাছের ভোগ দেওয়া হয় শ্মশান কালীকে। মধ্যরাতে তান্ত্রিক উপাচার মেনে পুজো হবে, ভোররাত পর্যন্ত পুজো চলবে, গত দুবছর করোনার কারণে মন্দিরের প্রসাদ বিলি বন্ধ রেখেছিলেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। এই বছর বিধিনিষেধ না থাকায় সকলের হাতে ভোগের প্রসাদ তুলে দেওয়া হবে বলে মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।


আরও পড়ুন: সিত্রাং-এর অর্থ কী? কেন এমন নাম ঘূর্ণিঝড়ের? কীভাবে ঠিক হয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম?