কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: শারদোৎসবের পর ফের উৎসবের আমেজ। দিকে দিকে শক্তি আরাধনা। গভীর রাতে কালো মেয়ের পায়ের তলায় আলোর নাচন। রীতি এবং ঐতিহ্য মেনে পুজোর আয়োজন রসুলপুরের বৈদ্যডাঙ্গার গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারে। 


কালীঘাট থেকে কামাখ্যা। কঙ্কালীতলা থেকে তারাপীঠ, সতী পীঠ-সিদ্ধ পীঠে বিশেষ পুজো অর্চনা। বীরভূম থেকে বারাসাত। দিকে দিকে শক্তির আরাধনা।  কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথির গভীর রাতে যোগিনী পরিবৃতা হয়ে আবির্ভূতা হন মা কালী। জগতে কল্যাণ এবং শান্তি স্থাপনের জন্য ভক্তরা দেবীর আরাধনা করেন। তিনি অসুখ বিনাশিনী। মহা শক্তিধর শুম্ভ-নিশুম্ভের হাত থেকে ত্রিলোককে রক্ষা করতেই দেবীর সৃষ্টি। নরমুণ্ডই দেবীর অলঙ্কার। যুদ্ধে পরাজিত সেনাপতিদের মুণ্ডের মালা মা কালীর কণ্ঠের শোভা। বলা হয়, পঞ্চাশটি মুণ্ডের এই মালা আসলে জ্ঞানের প্রতীক। যে সেনাপতি তাঁর চুল ধরে অপমান করেছিল, তাঁর মুণ্ড দেবী হাতে ধরে থাকেন। মৃত সেনাপতিদের হাতের পাতা দেবী কোমরে ধারণ করেন। শাস্ত্রমতে এই করতলও জ্ঞানের প্রতীক। ভুল করে স্বামী মহাদেবের গায়ে পা তুলে ফেলায় লজ্জিতা রণে উন্মত্ত দেবী।


আনুমানিক ৩৭৩ বছর আগে অধুনা বাংলাদেশের বরিশালে শুরু হয় গঙ্গোপাধ্যায় বাড়ির কালীপুজো। দেশ ভাগের আগে ১৯৪৩ সালে পরিবারের সদস্যরা এপার বাংলায় চলে আসে। অর্থনৈতিক কারণ তারপর কিছুদিন বন্ধ ছিল পুজো। ১৯৫২ সালে পরিবারের সদস্য যূথিকা গঙ্গোপাধ্যায় মায়ের স্বপ্নাদেশ পান। ফের শুরু হয় পুজো। 


পুজো উপলক্ষে গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই উপস্থিত হন। পুজোতে মহিলাদের উপস্থিতি চোখে পরার মতো। মায়ের ভোগ রান্না থেকে দেবীকে গয়না পরিয়ে সাজিয়ে তোলেন পরিবারের মহিলারা। প্রতিমা ডাকের সাজের। শাক্ত মতে পুজো হয়। আগে বলি প্রথা থাকলেও। বিগত ১০ বছর আগে থেকেই পরিবারের সদস্যদের সম্মতিতে বলি প্রথা বন্ধ হয়ে গেছে। আগে পরিবারের সদস্যরাই বাড়ির দেবীর পুজো করলেও বর্তমানে আর করেন না। কই, রুই ও বোয়াল মাছ দিয়ে ভোগ দিতে হয় মাকে। পারিবারিক এই পুজোতে অংশ নেন গ্রামবাসীরাও। কালীপুজো উপলক্ষে পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে উঠেন।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।    


আরও পড়ুন: RG Kar News: 'আমাদের জীবনের প্রদীপ নিভে গেছে, এখন শুধুই আঁধার' মেয়েকে হারিয়ে শোকে পাথর নিহত চিকিৎসকের বাবা মা