সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি: মাকে তাঁকে তুষ্ট করতে লাগে ল্য়াটা মাছ পোড়া। বছরের বছর ধরে এই খাদ্য়ই মায়ের প্রধান ভোগ। জনশ্রুতি রয়েছে, মাতৃভক্ত সাধক রামপ্রসাদকে বলি দিতে চেয়েছিল যে রঘু ডাকাত, তাঁর ভাইয়ের হাতেই প্রতিষ্ঠিত দেবী। যার পুজো ঘিরে রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস। লোকমুখে প্রচলিত, হুগলির সপ্তগ্রামের গভীর জঙ্গলে এই প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করে রঘু ডাকাতের ভাই বুধো ডাকাত। তবে তা রঘু ডাকাত কালী নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এক সময় সেই পুজোতেই প্রচলিত ছিল নরবলি। যদিও সেই মূর্তি বা প্রথার এখন আর কোনও অস্তিত্ব নেই। সাত ফুট উচ্চ বর্তমান বিগ্রহটির পদতলে শায়িত শিব। বুধো ডাকাতের প্রতিষ্ঠিত হলেও এই কালী রঘু ডাকাতের কালী নামে জনপ্রিয়। সিদ্ধেশ্বরী কালী হিসেবে পূজিতা হন।



১৯৯৮ সালে মন্দিরে ডাকাতি হওয়ার পর নতুন করে মূর্তি এনে মা কালী প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখন পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন স্থানীয়রা। এখন সেই দেবীকেই পুজো দিতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে মানুষ। বাগহাটির জয়পুরের বাসিন্দা বিধুভূষণ ঘোষ ও রঘু ঘোষ ঘন জঙ্গলের মধ্যে এই মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করে। তাঁরা দিনের বেলা ক্ষেতমজুরের কাজ করার পর রাতে এলাকার ধনী ও প্রভাবশালীদের বাড়িতে ডাকাতি করতে বেরোতেন। রঘু ডাকাতের দলবল জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যাতায়াতকারীদের গাছে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখত। এরপর ঢাকঢোল পিটিয়ে পুরোহিত ডেকে হত নরবলি। ওই এলাকার বাসিন্দা কার্তিক ভৌমিক বলেন, "কালী পুজোর দিন রাতে প্রথাগত নিয়ম মেনে মশাল জেনেই বর্তমানেও বলি প্রথা হয়ে আসছে। হাজার হাজার ভক্ত সমাগম হয় ওই রাতে। নতুন ভাবে মায়ের মন্দিরে নির্মাণ কার্য শেষ হলে প্রাচীন কথার মাহাত্ম্য মানুষের মধ্যে যুগ যুগান্তর হতে গেঁথে থাকবে মনে ও মননে।''


মাতৃভক্ত সাধক রামপ্রসাদ ত্রিবেণীর উল্টোদিকে হালিশহরের বাসিন্দা ছিলেন। কোনও এক সময় তিনি এই পথ ধরে ত্রিবেণী খেয়াঘাটে যাবার পথে, রঘু ডাকাতদের খপ্পরে পড়েন। ডাকাতদল তাঁকে মায়ের সামনে বলি দেবার জন্য ধরে আনেন। হাড়িকাঠে চড়ানোর আগে রামপ্রসাদ মাকে গান শোনানোর আর্জি জানান।  পেশায় নিষ্ঠুর ডাকাত হলেও রঘু ডাকাত ছিল একজন কালী সাধক। তিনি মাকে গান শোনানোর আবেদন মঞ্জুর করলেন। কথিত আছে মোহিত হয়ে রামপ্রসাদের শ্যামাসংগীত শুনতে শুনতে রঘু দেখেন হাড়িকাঠে রামপ্রসাদের পরিবর্তে মায়ের মুখ। কালীসাধক রঘু ডাকাত সঙ্গে সঙ্গে বলি বন্ধ করে রামপ্রসাদের সেবার বন্দোবস্ত করেন। পরদিন রামপ্রসাদকে নৌকাযোগে বাড়িতে পৌঁছে দেন। এরপর রঘুর জীবনে এক পরিবর্তন ঘটে। তিনি নৃশংস ডাকাতি,ও মানুষবলি ত্যাগ করেন। গ্রামবাসীদের কাছে সে হয়ে ওঠে ভগবানসম।  মন্দিরে সেবাইত সুমন চক্রবর্তী বলেন, "ডাকাতে কালীবাড়ি এবং সেখানে নরবলি কিন্তু ছিল এক প্রথা আর রঘু ডাকাতের কালীবাড়ি এর এক জলজ্যান্ত সাক্ষী। এই কালীকে রঘু নাকি খুঁজে পেয়েছিল এক পুকুরের তলা থেকে। বিপ্রদাস পিপলাই-এর ‘মনসামঙ্গল’-এও রঘু ডাকাতের কালীবাড়ির উল্লেখ আছে। জনশ্রুতি বলে প্রায় সাড়ে ৫০০ বছর আগে এখানে শ্মশানে কালীর উপাসনা শুরু করেন রঘু ডাকাত। তারপর কালীতলায় মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেবীর।  রঘুর হাতে দেবী পূজা পেতেন ‘সর্বমঙ্গলা’ নামে।''


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।    

আরও পড়ুন: Malda News: মিলল না অ্যাম্বুলেন্স, রোগীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভরসা খাটিয়া; ভাইরাল ভিডিও ঘিরে বিতর্ক