অরিত্রিক ভট্টাচার্য ও সৌমিত্র রায়, কলকাতা: দীপাবলিতে ফের শহরে দূষণের দাপট। বাতাসের দূষণমাত্রা ভয় ধরানোর মতো।  এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ছাড়িয়েছে ৩০০। গতকাল রাত ১২:০৪ পর্যন্ত বালিগঞ্জে সর্বোচ্চ দূষণের মাত্রা ৩৪৪। গতকাল রাত ১১:০৪ পর্যন্ত রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সর্বোচ্চ দূষণের মাত্রা ৩৩২। গতকাল ১২:০৪ পর্যন্ত বিধাননগর এলাকায় সর্বোচ্চ দূষণের মাত্রা ৩৩০। গতকাল রাত ১২:০৪ পর্যন্ত রবীন্দ্রসরোবর এলাকায় সর্বোচ্চ দূষণের মাত্রা ৩২৪। গতকাল রাত ১১:০৫ পর্যন্ত ঢাকুরিয়ায় সর্বোচ্চ দূষণের মাত্রা ৩১৫। 

Continues below advertisement

আরও পড়ুন, এবারও দীপাবলিতে শব্দ দানবের দাপট, রাত বাড়তেই দেদার ফাটল নিষিদ্ধ শব্দবাজি ! কলকাতায় গ্রেফতার ৬৪০

Continues below advertisement

আলোর উৎসবে দূষণের দাপট। সোমবার রাতে কলকাতার একাধিক জায়গায়, বাতাসের দূষণমাত্রা বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ৩০০ ছাড়িয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, শীতের শুরুর আগেই 'খুব খারাপ' পর্যায়ে রয়েছে বাতাসের গুণগত মান। দূষণের তালিকায় ওপরে নাম রয়েছে বালিগঞ্জ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার। অন্যদিকে, কলকাতা পুলিশের কমিশনারের দাবি, গত বছরের তুলনায়, এ বছর শব্দদূষণের মাত্রা কম।

রাত যত বেড়েছে, ততই বেড়েছে শব্দদানবের দাপট। বাজির আওয়াজে কান পাতা দায়। একের পর এক ফোন গিয়েছে থানায়। কিন্তু কে শুনছে কার কথা! হেমন্তে দূষণের চাদরে ঢেকেছে দিল্লি। ভাল নেই রাজ্যের রাজধানীও। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্টে বলা হয়েছে - কালীপুজোর রাতে, দেদার শব্দবাজির দাপটে বাতাসের মান কার্যত ভয় ধরানোর মত। প্রতি ঘন মিটার বাতাসে Particulate Matter বা PM-এর স্বাভাবিক মাত্রা ১০০ মাইক্রোগ্রাম। সেখানে সোমবার  রাত ১২টা ৪ মিনিট পর্যন্ত, বালিগঞ্জে Air quality index বা AQI ছিল ৩৪৪। তার এক ঘণ্টা আগে, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সেই মাত্রা ছিল ৩৩২।  রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পরিমাপ অনুযায়ী, রাত ১২টা ৪ মিনিট পর্যন্ত, বিধাননগর এলাকায় সর্বোচ্চ দূষণের মাত্রা ছিল ৩৩০। একই সময় পর্যন্ত, রবীন্দ্রসরোবর এলাকায় সর্বোচ্চ দূষণের মাত্রা ছিল ৩২৪। সেই তুলনায় তালিকায় নীচের দিকে নাম রয়েছে ঢাকুরিয়ার। সেখানে রাত ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত, সর্বোচ্চ দূষণের মাত্রা ছিল ৩১৫। কী এই Particulate Matter বা PM? Particulate Matter বা PM হচ্ছে বাতাসের মধ্যে মিশে থাকা কঠিন বা তরল কণা। আমাদের মাথার একটি চুলের পরিধির ৫ থেকে ৭ গুন ছোট হচ্ছে বাতাসে সব থেকে বড় ধুলিকণার পরিমাপ। যাকে বলা হয় PM10 বা Particulate Matter10। আর তার চার ভাগের একভাগ আকারের ছোট কণার পরিমাপ Particulate Matter2.5 বা  PM2.5। 

প্রশ্বাসের সঙ্গে যা আমাদের শরীরে ঢোকে। সহনশীল মাত্রা ছাড়ালেই শরীরে সৃষ্টি করে নারা জটিলতা। ডেকে আনতে পারে মৃত্যু। Air quality index বা AQI শূন্য থেকে ৫০ হলে, বাতাসের মান খুব ভাল। ৫১ থেকে ১০০-র মধ্যে হলে তা সন্তোষজনক। ১০১ থেকে ২০০ হলে তা মডারেট বা মোটামুটি।  AQI ২০০ থেকে ৩০০ পর্যন্ত থাকলে সেখানকার বাষুদূষণ উদ্বেগজনক। এই বাতাসে বেশিক্ষণ থাকলে ফুসফুসের সমস্যা বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ৩০১ থেকে ৪০০ পর্যন্ত পৌঁছে গেলে তা মারাত্মক। ৪০১-৫০০ তীব্র দূষণের সূচক। এরকম জায়গায় বেশিক্ষণ নিঃশ্বাস নিলে শ্বাসযন্ত্রের মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সময়ে সবুজ বাজিতে ছাড় থাকলেও, শব্দবাজির আওয়াজ থেকে রেহাই এবারও রেহাই পাননি রাজ্যবাসী। যদিও কলকাতার পুলিশ কমিশনারের দাবি, গত বছরের তুলনায়, এ বছর শব্দদূষণের মাত্রা কম। অন্যদিকে, মঙ্গলবার সকালে প্রায় গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয় রাজধানী দিল্লি।  পরিমাপ অনুযায়ী, ঘন এবং ভারী ধোঁয়ার আস্তরণে ঢাকা পড়া দিল্লির বাতাসের মান ছিল 'অত্যন্ত খারাপ'। কোনও কোনও এলাকাকে দূষণের 'রেড জোন' বলে চিহ্নিত করা হয়। Central Pollution Control Board বা CPCB-র পরিমাপ অনুযায়ী, মঙ্গল সকাল ৮টা পর্যন্ত দিল্লির সামগ্রিক Air quality index ছিল ৩৫০। তার মধ্যে বাওয়ানায় সকাল ৮টা পর্যন্ত ৪২৩ AQI রেকর্ড করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরপুরীতে ৪০৭ AQI  এবং ওয়াজিরপুরে AQI ছিল ৪০৮।