কলকাতা: পরিস্থিতি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যাওয়ার আগে সংযত হওয়ার নির্দেশ এসেছিল। তাতেই বাগ্‌যুদ্ধ থেমে যাবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) মন্তব্য ঘিরে তৃণমূলের (TMC) অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ক্রমশ বেড়েই চলেছে। দলের বাকিদের সঙ্গে নিজের ফারাকটা ঠিক কোথায়, এ বার তা প্রকাশ্যেই তুলে ধরলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee)। তাঁর দাবি, ফারাকটা শুধু শিরদাঁড়ায়।


যত সময় যাচ্ছে, ততই বেশি অভিষেকপন্থীরা কার্যত চেপে ধরার চেষ্টা করছেন কল্যাণকে। প্রকাশ্যে তাঁকে ‘ঘরশত্রু বিভীষণ’ বলে কটাক্ষ করেছেন আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দার। তাঁকে জায়গা বুঝিয়ে দিতে দেখা গিয়েছে কুণাল ঘোষকেও। এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে দেখা যায় তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। কল্যাণ এবং প্রকাশ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন তিনি।


কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই ফেসবুকে কার্যত বিস্ফোরণ ঘটালেন কল্যাণ। শ্রীজাতর ‘তফাত’ কবিতার বিশেষ দুই ছত্র, ‘মানুষ থেকেই মানুষ আসে, বিরুদ্ধতার ভিড় বাড়ায়; আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়’—নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তুলে ধরেন কল্যাণ।



কবিতার নীচে শ্রীজাতকে সৌজন্য জানানো ছাড়া আর কারও নাম উল্লেখ করেননি কল্যাণ। তবে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, কুণাল, অপরূপা এবং তৃণমূলে অভিষেকপন্থীদেরই আসলে নিশানা করছেন কল্যাণ। আবার রাজনৈতিক মহলেরই একাংশের মতে, দলের স্বার্থকেই সামনে রেখেছেন তিনি। কিন্তু তৃণমূলের একাংশ উপরমহলকে খুশি করতে তাঁকে নিশানা করছেন। সেই কারণেই শিরদাঁড়ার ফারাক বোঝাতে তৎপর হয়েছেন কল্যাণ।


আরও পড়ুন: Partha Chatterjee Update: কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ হোক, সংঘাত আবহে কল্যাণ-অপরূপাদের বার্তা পার্থর


করোনা আবহে বকেয়া চার কেন্দ্রে পুরভোট করানোর বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। বিরোধীরা যেখানে ভোট পিছনোর দাবি তুলছেন, সেখানে রাজ্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কার্যত পরস্পরের ঘাড়ে দায় ঠেলছে। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি অভিষেক জানান, তিনি সমস্ত রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় কর্মসূচি দু’মাস বন্ধ রাখার পক্ষপাতী। তবে এটা সম্পূর্ণ ভাবেই তাঁর ‘ব্যক্তিগত মতামত।’ অভিষেকের এই মন্তব্য নিয়েই টানা হ্যাঁচড়া শুরু হয়। কল্যাণ জানান, ভোট বন্ধ রাখার পক্ষে সওয়াল করায় বিজেপি-র সঙ্গে অভিষেকের সুর মিলে যাচ্ছে, যা দল এবং নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। কারণ বিষয়টি নিয়ে হাই কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে রাজ্যকে।


দলে উচ্চ পদে থেকে অভিষেক যদি প্রকাশ্যে ‘ব্যক্তিগত মতামত’ জানাতে পারেন, তাহলে তিনিও এ বার আর পিছু হটবেন না বলে জানিয়ে দেন কল্যাণ। সেই সঙ্গে যোগ করেন, সাংগঠনিক ভাবে কেউ উচ্চ পদে থাকতেই পারেন। কিন্তু মমতা ছাড়া কাউকে নেতা বলে মনে করেন না তিনি। সেই নিয়েই বিগত দু’দিন ধরে পরস্পরের উদ্দেশে কটাক্ষ, পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে চলেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এ দিন তা নিয়ে সকলকে সংযত হওয়ার নির্দেশ দেন পার্থ। কিন্তু এত সহজে যে ঝামেলা মিটবে না, তা কল্যাণের পোস্ট থেকেই পরিষ্কার।