বাচ্চু দাস, করুণাময় সিংহ, শিলিগুড়ি : সোমবার ঠিক যেমন ভাবে মালগাড়ির ধাক্কায়, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের বগি এদিক-ওদিক হয়ে গেছে, তেমনি এই দুর্ঘটনায় অনেক পরিবারও যেন ওলটপালট হয়ে গেছে।
বাবা, মায়ের সঙ্গে মাটিগাড়ায় মামাবাড়ি গিয়েছিল, মালদার কালিগঞ্জের বাসিন্দা ৬ বছরের স্নেহা মণ্ডল। ক্লাস টু-এর ছাত্রী। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ট্রেনের পিছন দিকে জেনারেল বগিতে উঠেছিল তারা। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটে যায় সেই মর্মান্তিক ঘটনা। মালগাড়ির ধাক্কায় একেবারে পাল্টি খেয়ে যায় জেনারেল বগি। দুর্ঘটনায় জখম হয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মা-বাবা ও মেয়েকে। পরে সেখানেই মৃত্যু হয় ছোট্ট স্নেহার।
মালদার চাঁচলের বাসিন্দা মহীলাল মণ্ডল। স্ত্রী ও ৬ বছরের মেয়ে স্নেহাকে নিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফিরছিলেন মহীলাল। বাবা-মা ও শিশু ৩ জনেই আহত হন। গুরুতর আঘাত লাগায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারও হয় ছোট্ট স্নেহার। বাবা-মা বেঁচে গেলেও মৃৃত্যু হয় দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রীর। বাবা স্কুল শিক্ষক, মা ছবি মণ্ডল চাঁচলের ক্ষেমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যা।
শোকের ছায়া নেমে এসেছে স্নেহার বাড়ি ও মামার বাড়িতেই। দুই বাড়িতেই বড় আদরের ছিল সে। কাকা শ্যামল মণ্ডল জানালেন, বাড়ি ফিরছিল সে। শিলিগুড়িতে মামারবাড়িতে ঘুরতে এসেছিল, আর ঘরে ফেরা হল না তার।
ফিরল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের গার্ড আশিস দে-র দেহ
শুধু স্নেহাই নয়। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে ১০ টি প্রাণ। তার মধ্যে ছিলেন মালগাড়ির চালক, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের গার্ডও। মেয়ের সঙ্গে ফাদার্স ডে পালন করবেন বলে ডিউটি বদল করেছিলেন, আর সেটাই কাল হয়েছএ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের গার্ড আশিস দে-র। সোমবার ডিউটি ছিল নিউ জলপাইগুড়ি থেকে শিয়ালদাগামী জনশতাব্দী এক্সপ্রেসে। কিন্তু ফাদার্স ডে উপলক্ষ্যে কলকাতা থেকে শিলিগুড়ির সুকান্ত পল্লির বাড়িতে ফিরেছিল মেয়ে। অনেক রাত পর্যন্ত জমিয়ে খাওয়াদাওয়া চলে। তাই কাঞ্চনজঙ্ঘায় ডিউটি নিয়েছিলেন আশিস। ফাঁসিদেওয়ার কাছে ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে শুনেই বিপদ আশঙ্কা করেছিলেন আশিসের পরিবারের সদস্যরা। সকালে হাসিমুুখে বেরিয়েছিলেন, বিকেলে বাড়ি ফেরে রেল কর্মীর নিথর দেহ।
ফুলবাগানের বাসিন্দা শঙ্করমোহন দাস কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পার্সেল ভ্যানের কর্মী ছিলেন। সোমবার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৬২ বছরের রেল কর্মীর। অবসরের পর এক্সটেনশনে ছিলেন শঙ্করমোহন। তাঁর পরিবারের দাবি, দুর্ঘটনার পর পাশে দাঁড়ায়নি রেল কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় প্রশাসনই সব ব্যবস্থা করেছে বলে মৃত রেল কর্মীর পরিবার দাবি করেছে।
আরও পড়ুন :
কর্মক্ষেত্রে নতুন সুযোগ কর্কটের, মকরের বিরাট অর্থযোগ, এই সপ্তাহে সাফল্যে ভরে উঠবে এই ৫ রাশির ঝুলি