অমিত জানা, কেশিয়াড়ি(পশ্চিম মেদিনীপুর) : পণ্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রয়াণ দিবসের ঠিক আগেই কেশিয়াড়ি থানার বনচাটুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের জন্য জমি দান করলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হরিপদ ওঝা। বুধবার ২৮ জুলাই সন্ধ্যায় নিজের বাড়িতে ১৬ ডেসিমেল জমির দানপত্রের আইনি কাজ সম্পন্ন হল। খড়্গপুর সাব রেজিস্ট্রারের এক আধিকারিক এসে এই কাজ সম্পন্ন করেন। বনচাটুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অখিলবন্ধু মহাপাত্রকে দানপত্র করেন হরিপদবাবু।
১৯৫৬ সালে বনচাটুল প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। হরিপদ ওঝার বাবা স্বর্গীয় পীতাম্বর ওঝা সেই সময় বিদ্যালয় গড়ে তোলার জন্য ২১ ডেসিমেল জমি দান করেছিলেন। বিদ্যালয় গড়ে উঠলেও পর্যাপ্ত খেলার জায়গা ছিল না। এই বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় সুন্দরাড় হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হরিপদ ওঝার। একসময় তিনি বনচাটুল গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন। বর্তমানে বেলদার কলেজরোড সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা। তাঁর দুই পুত্র ও দুই কন্যা। দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে হরিপদবাবু এবং তাঁর সহধর্মিণী শয্যাশায়ী। এই পরিস্থিতিতে ও বাবার আদর্শকে অনুসরণ করে হরিপদবাবু কয়েকদিন আগেই লিখিতভাবে বনচাটুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অখিলবন্ধু মহাপাত্রকে দান করা জমি গ্রহণের আবেদন করেন। বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক সেই আবেদনে সম্মতি দেন। দানপত্র রেজিস্ট্রির খরচ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই বহন করার সিদ্ধান্ত নেন।
গত ২৭ জুলাই খড়্গপুরের সাব রেজিস্ট্রারের অফিসে দানপত্রের দলিল দাখিল করেন অখিলবন্ধু মহাপাত্র। ২৮ জুলাই সন্ধ্যায় সাবরেজিস্ট্রারের প্রতিনিধি আধিকারিকের উপস্থিতিতে হরিপদবাবুর বেলদার বাসভবনে বনচাটুল প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ১৬ ডেসিমেল জমি (দাগ নং ১৭৯, জে. এল নং ১৯০) দানপত্রের আইনত কাজ সম্পন্ন হয়। জমি দান করে হরিপদবাবু বলেন, 'বনচাটুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কচিকাঁচাদের খেলার মাঠের এবার ব্যবস্থা হবে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অখিলবন্ধুবাবু কাজের মানুষ। স্কুলকে তিনি ভালোবাসেন। তাঁর হতে এই দানপত্র করে আমি খুশি। আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হল'।
হরিপদবাবুর এই অবদানের কথা স্মরণ করে বৃহস্পতিবার তাঁর বাসভবনে গিয়ে বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক অখিলবন্ধু মহাপাত্র, মানিক দাস ও দিব্যেন্দু দাস সংবর্ধিত করেন। হরিপদবাবুর হাতে একটি সচিত্র মানপত্র, পণ্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রতিকৃতি, পবিত্র "গীতা" তুলে দেওয়া হয়।
অখিলবন্ধু মহাপাত্র বলেন, ২০১৬ সালে বিদ্যালয়ের হীরক জয়ন্তী উৎসবের পর ধীরে ধীরে বিদ্যালয়ের অগ্রগতি হচ্ছে। হরিপদবাবুর এই জমি দান আজ সকলের কাছে উদাহরণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে হরিপদবাবু এবং তাঁর বাবার ভূমিকা আমরা চিরদিন মনে রাখব। বিদ্যাসাগরের মহাপ্রয়াণ দিবসের প্রাক্কালে একটি বিদ্যালয়ের কাছে এ এক চরম প্রাপ্তি। পণ্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর যেমন শিক্ষার উন্নয়নে সর্বস্ব দান করতেন, আজ রোগশয্যায় থেকে হরিপদবাবুও একই কাজ করলেন। তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর ভাষা নেই।