কলকাতা: মঙ্গলবার কলকাতা পুরসভা ভোটের ফল প্রকাশিত হয়েছে। সি ভোটারের বুথ ফেরত সমীক্ষা মিলে গিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩৪টিতেই জয়ী হয়েছে। বিজেপি মাত্র তিনটি ওয়ার্ডে জয় পেয়েছে। কংগ্রেস ও বামেরা দু’টি করে আসনে জয় পেয়েছে। নির্দলরা তিনটি আসনে জয় পেয়েছেন।
তৃণমূলের একার ঝুলিতেই গেছে প্রায় ৭২% ভোট। প্রাপ্ত ভোটের হারের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বামেরা পেয়েছে ১২% ভোট। বিজেপি ৯% এবং কংগ্রেস ৪% ভোট পেয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেও কয়েকটি ওয়ার্ডে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। ভোট শতাংশের হার একটু এদিক-ওদিক হলেই অন্য কেউ জিতে যেতে পারতেন।
এদিনের ফলে দেখা যাচ্ছে, অল্প ব্যবধানে জিতেছেন বিজেপি প্রার্থী মীনাদেবী পুরোহিত, বিজয় ওঝা, সজল ঘোষ, কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠকরা।
তবে সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে ২১ নম্বর ওয়ার্ডে। মাত্র ৪৪ ভোটে জয় পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী মীরা হাজরা। তিনি পেয়েছেন ৩,৮৫১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম প্রার্থী সুজাতা সাহার প্রাপ্ত ভোট ৩,৮০৭।
৪১ নম্বর ওয়ার্ডেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। ১,১১২ ভোটে জয় পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী রীতা চক্রবর্তী। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৩,১১৮। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী রাজীব কুমার সিনহা পেয়েছেন ২,০০৬ ভোট।
৪২ নম্বর ওয়ার্ডেও টানটান লড়াই হয়েছে। মাত্র ৭২৮ ভোটে জয় পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী মহেশ কুমার শর্মা। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৩,৩৫৩। এই ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিজেপি প্রার্থী সুনীতা ঝাওয়ার পেয়েছেন ২,৬২৫ ভোট।
রবিবার ভোটের দিন বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী মীনাদেবী পুরোহিতকে নানা ভাবে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কিন্তু, কোনওকিছুই দমাতে পারল না প্রাক্তন ডেপুটি মেয়রকে। ২২ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী জিতলেন ১ হাজার ৫২৩ ভোটে। এই নিয়ে টানা ৬ বার একই ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেন তিনি।
রবিবার রীতিমতো রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড। দফায় দফায় দিনভর উত্তেজনা তৈরি হয়। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ভিতরে পুলিশের সামনেই কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের ফেলে কিল-চড়-ঘুষি-লাথি মারা হয়েছিল। হেনস্থা করা হয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তীকে। কিন্তু, চোখে চোখ রেখে লড়াই করে শেষ অবধি বাজিমাত করলেন কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠক। তাঁর জয়ের ব্যবধান প্রায় ৩,০০০। ২০০৫ থেকে এই নিয়ে টানা চারবার ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতলেন কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতা সন্তোষ পাঠক। এবারও তাঁকে হারাতে পারল না তৃণমূল।
রবিবার দুপুরে কলকাতার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে, বুথ দখল করে দেদার ছাপ্পার অভিযোগ উঠেছিল। বিজেপি প্রার্থী বিজয় ওঝাকেও মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু তারপরেও এই ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থীর হ্যাটট্রিক আটকানো গেল না। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী বিজয় ওঝা জিতলেন ৩ হাজার ২১৩ ভোটে।
বাবা প্রদীপ ঘোষ পাঁচবারের কংগ্রেস কাউন্সিলর ছিলেন। কিন্তু, তিনি নিজে কখনও জনপ্রতিনিধি হননি। এবার সেই সজল ঘোষই ঘরের মাঠে কঠিন লড়াইয়ে তৃণমূলকে হারিয়ে দিলেন। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রথমবার পদ্ম ফুটল সজল ঘোষের হাত ধরেই। জিতলেন ১ হাজার ৫৩ ভোটে।
চমকপ্রদ ফল হয়েছে কলকাতা পুরসভার ১৩৭ নম্বর ওয়ার্ডেও। তীব্র টানাপোড়েনের পর ১ হাজার ৩৭৪ ভোটে তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়ে দেন কংগ্রেসের ওয়াসিম আনসারি।
৩৯ নম্বর ওয়ার্ডেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। ১,৫২৫ ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী মহম্মদ জশিমউদ্দিন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৫,৩৩৩। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস প্রার্থী আলি হুসেইন পেয়েছেন ৩,৮০৮ ভোট।