কলকাতা: কলকাতা পুরসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে কয়েকজন নির্দল প্রার্থীর জয় পাওয়া প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি বলেন, ‘আমাদের কাছে যা তথ্য আছে, তাঁরা শাসক দলেরই প্রার্থী ছিলেন। টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেশ করেছেন। জয়ের পর তাঁরা শাসক দলে ফিরে যাচ্ছেন।’


এ প্রসঙ্গে শমীক বলেন, ‘দখলদারির মেশিনারিটা তাঁদের হাতে ছিল, সেই কারণে জিতেছেন। স্থানীয় রাজনৈতিক রসায়নের কারণে শাসক দলের সরকারি প্রার্থীর হাতে দখলদারির মেশিনারিটা ছিল না। তাঁরা জেতার সঙ্গে সঙ্গেই ঘোষণা করে দিয়েছেন, শাসক দলে ফিরে যাবেন।’


তৃণমূল কংগ্রেসের পাশাপাশি রাজ্য নির্বাচন কমিশনকেও কটাক্ষ করে শমীক বলেন, ‘রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন। কলকাতা পুলিশকেও অভিনন্দন। বিশেষ করে অভিনন্দন ফৈয়জ আহমেদ খানকে। ৬২ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতে কলকাতা পুরসভায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য তাঁকে অভিনন্দন। যে ফল আমাদের সামনে এসেছে, সেই ফল বিস্ময়কর। যেভাবে নির্বাচন হল, সকালে সাড়ে সাতটা থেকে সংবাদমাধ্যম মানুষের সামনে যে চিত্র পরিবেশন করল, বিভিন্ন বুথে, বুথের সামনে প্রার্থী, প্রার্থীর এজেন্ট যেখানে প্রহৃত হচ্ছেন। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে না। কোথাও ভোটের লম্বা লাইন নেই। তারপরেও ভোট পড়ার শতাংশ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলল। আমাদের অতীতে পাঁচবারের কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত আক্রান্ত হলেন। তাঁর জামাকাপড় ছেঁড়া হল। দিনের শেষে তাঁর আটটি বুথ লুঠ হল। একটি বুথে সমস্ত সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙা, বুথের ভেতর ইভিএম মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন কোনও বুথেই কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা দেখতে পেল না। আমাদের প্রার্থী ভুয়ো ভোটার ধরতে গেলে প্রচণ্ডভাবে মার খেলেন। রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করার চেষ্টা করা হলেও, আধার কার্ড না থাকার কারণে ভর্তি নেওয়া হল না। পরবর্তীকালে বেসরকারি নার্সিংহোমে তাঁকে ভর্তি করা হল। এই পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনকে যাঁরা অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করবেন বলেছিলেন, তাঁরা উৎসবের মেজাজে গোটা ভোটে ছাপ্পা চালিয়েছেন। তারপরেও কী করে কয়েকটি আসনে বিরোধী প্রার্থীরা এগিয়ে গেলেন, এটা চরম বিস্ময়ের ব্যাপার।’


শমীক আরও বলেন, ‘অতীতে যা বলেছি, আবার সেটাই বলছি। এই নির্বাচনের ফল জনমানসের প্রতিফলন নয়। এই নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ছিল না। সেই কারণে এবারের নির্বাচনে মানুষের অংশগ্রহণ কম ছিল। এই পুলিশ দিয়ে, এই প্রশাসন দিয়ে কোনওদিন অবাধ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব নয়। রাজ্য নির্বাচন কমিশন কার্যত শাসক দলের সংগঠন। পুলিশ আদালতকে আশ্বস্ত করতে পেরেছিল, তারা অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে পারবে। আদালত তাদের কথার উপর বিশ্বাস রেখেছিল। তার ফল আজ আমরা দেখতে পেলাম। আবার বলছি, এই ফল স্বাভাবিক নয়। এই ফল অপ্রত্যাশিত। যেভাবে ভোট হয়েছে, তার পরিণতি অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। তাই কে জিতেছে, কে হেরেছে, এই বিতর্কের কোনও প্রয়োজন নেই। পশ্চিমবঙ্গের এই উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সব মানুষের, আমরা যারা সংসদীয় ব্যবস্থায়, বহুদলীয় ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করি, তাদের প্রত্যেকেরই চিন্তুাভাবনা করা দরকার। শাসক দলেও কিছু মানুষজন আছেন, যাঁরা এই ভোট-সংস্কৃতির পরিবর্তন চান। যাঁরা সরাসরি কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত নন, এই ধরনের মানুষজন যাঁরা আছেন, সবাইকেই চিন্তা করতে হবে। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড যদি রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে পারে, তারা যদি ভোটকে কেন্দ্র করে রক্ত ঝরা, বুথ দখলের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, তাহলে যে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে আমাদের অনেক গর্ব, উন্নাসিকতা আছে, তারা সেটা থেকে মুক্ত হবে।’