কলকাতা: প্রথমবার ভোটে লড়াই করেই কলকাতা পুরসভার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে জিতলেন বিজেপি প্রার্থী সজল ঘোষ। তিনি জয়ের পর বলেন, ‘মানুষের দাস হয়ে থাকব। মানুষ আমাকে তাঁদের কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি মানুষের হয়ে গেলাম আজ থেকে।’


কিছুদিন আগে দল বদল করে তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যোগ দেন সজল। এরপর গ্রেফতার হন তিনি। পরে অবশ্য জামিন পেয়ে যান তিনি। সেই বিতর্ক প্রসঙ্গে আজ জয়ী বিজেপি প্রার্থী বলছেন, ‘মানুষ সবকিছুর জবাব দিয়েছেন। আমার কিছু বলার নেই। আমি আজ থেকে মানুষের। মানুষের কাজ করেছি, তার ফল পেয়েছি।’


অন্যদিকে, কলকাতা পুরসভা ভোটে বড় ধাক্কা খেল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। ২০১৫-র পুরভোটের তুলনায় তিনটি আসন হারাল তারা। প্রাপ্ত ভোটের হারের নিরিখেও ধাক্কা খেল বিজেপি। প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে গেরুয়া শিবিরকে ছাপিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল বামেরা। বিজেপি-র নক্ষত্র পতন হল ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে। হেরে গেলেন পাঁচবারের কাউন্সিলর সুনীতা ঝাওয়ার। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদি ঝড়ে ভর করে এ রাজ্যে দু’টি লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হয় বিজেপি। সেবারের লোকসভা ভোটের ওয়ার্ডভিত্তিক ফলাফল অনুযায়ী, কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল এগিয়ে ছিল ৯৯টি আসনে। বিজেপি লিড পায় ২৬টি ওয়ার্ডে। এক বছর পরে ২০১৫-র পুরসভা নির্বাচনে কলকাতার সাতটি ওয়ার্ডে জয়ী হয় বিজেপি। এরপর ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন। রাজ্যে বিজেপির সাংসদ সংখ্যা ২ থেকে বেড়ে হয় ১৮। কলকাতায় একটিও আসনে না জিতলেও ২২টি ওয়ার্ডে লিড পায় বিজেপি। এরপর ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হয় ৭৭টি আসনে। প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পায় তারা।


গত বিধানসভা ভোটের ওয়ার্ডভিত্তিক ফল অনুযায়ী, কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩৩টিতেই এগিয়ে তৃণমূল। বিজেপি এগিয়ে ছিল ১০টি আসনে। প্রাপ্ত ভোটের হারও বেড়েছিল তাদের। কিন্তু কলকাতা পুরসভার ভোটে শেষপর্যন্ত শোচনীয় ফল করল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। এবার কলকাতা পুরসভা ভোটে সবার শেষে প্রার্থী ঘোষণা, সবার শেষে ইস্তেহার প্রকাশ, দলের তারকা প্রচারকদের সেভাবে রাস্তায় না নামা, বিজেপি শিবির শুরু থেকেই ছিল ম্রিয়মান।


এই অবস্থাতেও বিজেপির যাঁরা জিতলেন, সেই ২২ নম্বর ওয়ার্ডের মীনাদেবী পুরোহিত, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয় ওঝা-দের জয় এল কার্যত নিজেদের ক্যারিশ্মায়। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছেন বিজেপি-র সজল ঘোষ। রাজনৈতিক পরিবার হিসেবে যাঁদের প্রভাব আছে ওই ওয়ার্ডে। সজল ঘোষের বাবা প্রদীপ ঘোষ দীর্ঘদিন ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেসের কাউন্সিলর ছিলেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে বামেদের আসন সংখ্যা গতবারের তুলনায় কমে গেলেও, প্রাপ্ত ভোটের হারের নিরিখে তারা এগিয়ে বিজেপির চেয়ে। অনেকেরই প্রশ্ন, তাহলে কি ধীরে ধীরে ‘রামে’ চলে যাওয়া ভোট ফিরছে বামেদের দিকে? দিনের শেষে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের একটাই মত, কলকাতা পুরসভার ভোটে বিজেপির ‘নো গেন’।