প্রিয়াঙ্কা দত্ত, কলকাতা : বাস ধরার জন্য অপেক্ষা। গন্তব্যের বাস পেতে ঠিক কতক্ষণ লাগতে পারে, হাতঘড়িতে মাপতে মাপতে মোবাইল বের করে খুট-খুট। গেম খেলা, গান শোনা হোক বা নিদেন একটু কাছের কারও সঙ্গে একটু কথা বলে নেওয়া। যে কোনও বাসস্ট্যান্ডের কথা ভাবলেই চোখে ভেসে উঠবে এমনই দৃশ্য। কিন্তু বাসের অপেক্ষার মাঝে বইয়ের পাতায় চোখ!  অপেক্ষার সময় বোঝার ঝক্কির মাঝে একাধিক বই ঘেঁটে খুঁজে নেওয়া মনপসন্দ বই-টা। বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায় থাকা ঠিক ক'জনের হাতে ব়্যাক থেকে বই নেমে আসবে, তা তো সময়ই বলবে। তবে একটা বা দুটো নয়, এক্কেবারে আস্ত লাইব্রেরি বসছে বাসস্ট্যান্ডে। খাস কলকাতায়। কোথায়? মধ্য কলকাতার জোড়া গির্জা (Jora Girja Bus Stand) বাসস্ট্যান্ডে।


আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে (Alimuddin Street) পথচলতি মানুষের চেষ্টা মেটাতে জন্য ফ্রিজ বসিয়ে কার্যত হইচই ফেলছিলেন যিনি, এবারের বাসস্ট্যান্ড লাইব্রেরির উদ্যোগও নেই আলিমুদ্দিনের তৌসিফের। মাস ঘুরতে না ঘুরতেই ফের খবরের শিরনামে মহম্মদ তৌসিফ রহমান (Md Tauseef Rahman)। 


ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে তৌসিফের নতুন উদ্যোগের খবর। যদিও এমন ভাবনা নতুন নয়, এর আগেও স্ট্রিট লাইব্রেরির (Street Library) খবর চোখে পড়েছে বহুবার। তবুও তৌসিফের এই লাইব্রেরি নিয়ে সাধারণের উৎসাহ নেহাত কম নয়। 'মানুষের জন্য কাজ করতে চাই, যখন যেভাবে পারব দিয়ে যাব', এ কথা আগেই এবিপি লাইভকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তৌসিফ। তাঁর কাজের কথা আজ আর শহরবাসীর অজানা নয়। 


হঠাৎ কেন এমন ভাবনা? তৌসিফ জানিয়েছেন, যাঁরা দীর্ঘক্ষণ বাসস্ট্যান্ডে বসে অপেক্ষা করেন তাঁদের জন্যই এই উদ্যোগ। মোবাইল ফোনের আসক্তি যাতে সামান্য হলেও কমে তা নিয়েও ভাবছেন তৌসিফ। তবে বাস ধরার তাড়া যদি নাও থাকে, সে ক্ষেত্রেও ইচ্ছে হল অনায়াসে খানিক সময় কাটিয়ে নেওয়া যাবে এখানে এসে, কী বলেন?


তৌসিফের লাইব্রেরি তৈরিতে আপাতত কোনও সাহায্যের হাত থাকছে। সবটাই করবেন তিনি নিজে। প্রাথমিক খরচ বহন করবেন তৌসিফই। তবে কেউ যদি পুরনো বই দান করতে চান যোগাযোগ করতে পারেন তৌসিফের সঙ্গে। 


কেমন হবে সেই লাইব্রেরি? প্রাথমিক ভাবে একটা অ্যালুমিনিয়ামের ব়্যাক বানিয়ে সেখানে বই রাখা হবে। 


কী কী থাকবে? মূলত ছোট গল্পের বই রাখারই পরিকল্পনা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ থেকে নজরুল। বাংলা, ইংরেজি ,হিন্দি থেকে উর্দু। সমস্ত বই-ই রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। শুধু বড়দের জন্যই রঙ-বেরং বই থাকবে ছোটদের জন্যও। বই-এর পাশাপাশি ছোটদের জন্য রাখা হবে খাতাও। বাসস্ট্যান্ডে বসে যা নিয়ে সময় কাটাতে পারবে খুদেরাও। তৌসিফের ইচ্ছে এমন কিছু বই রাখার, যাতে কলকাতার ছোটো ছোট ইতিহাসও ধরা থাকবে। এই যেমন জোড়া গির্জা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েও যদি কেউ পড়ে ফেলতে পারেন সেই নামের কাহিনী, বিষয়টা বেশ মজাদার হয় কিনা বলুন?


দু-তিন দিনের মধ্যেই ব়্যাক ভর্তি বই-এক পসরা বসে যাবে বাসস্ট্যান্ডে। আপাতত ছোটো করেই বাসট্যান্ডে লাইব্রেরি বানাতে চান তিনি। মানুষের প্রতিক্রিয়া পেলে প্রসাশনিক স্তরে কথা বলে বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডেই বই-এর পসরা সাজিয়ে দিতে চায় সে। 


সব তো হল, কিন্তু বই চুরি যাওয়ার ভয়? এই প্রশ্নে আবারও বিশ্বাসের প্রসঙ্গই টেনেছে আলিমুদ্দিনের যুবক। তাঁর কথায়, কাউকে যদি ভালবাসা উজার করে দেওয়া যায়, কেন খারাপ কাজ করবে বলুন তো? তাই বই চুরি যাওয়ার ভয় পাচ্ছেন না তৌসিফ। রাস্তার ধারে বসানো ফ্রিজের যত্নের ভার যেমন নিজেই নিয়েছিল সাধারণ মানুষ। তেমনই বই দেখভালের দায়িত্বও তাঁরা নিজেদের কাঁধেই তুলে নেবেন বলেই আশাবাদী মহম্মদ তৌসিফ রহমান। 


কী খবর তৌসিফের ফ্রিজের? তৌসিফ বললেন, সেও নাকি বহাল তবিয়তেই রয়েছে নিজস্থানে। পথচলতি মানুষের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। তৌসিফ যেমনটা আশা করেছিল শুরুতে তেমনভাবেই দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছেন এলাকাবাসী। 


সবমিলিয়ে এখন বাসস্ট্যান্ডে লাইব্রেরি বানাতে ব্যস্ত তৌসিফ, গরমে যেমন প্রাণ জুড়িয়েছিল সে, এবার মনও ভরাতে চায় তেমন করেই। 


আরও পড়ুন: Free Cold Water:ফ্রিজ কিনে রেখেছেন রাস্তায়, পথচারীদের তেষ্টা মেটাতে উদ্যোগী তৌসিফ