সৌভিক মজুমদার, কলকাতা : নিয়োগ দুর্নীতিতে তোলপাড় রাজ্য। তার মধ্যেই এবার গ্রুপ-ডি মামলায় চাকরি খোয়ালেন  ১ হাজার ৯১১ জন। এদের সুপারিশ প্রত্যাহার করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে কমিশন। শুধু তা-ই নয়, এই ১ হাজার ৯১১ জনকে প্রয়োজনে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে সিবিআই-কে, এমন নির্দেশও দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু, কাদের চাকরি গেল ? 




তালিকার প্রথম দিকে যাদের নাম রয়েছে


এই সংক্রান্ত মামলায় আজ সিবিআইয়ের উদ্দেশে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় খুব স্পষ্ট নির্দেশ দেন, এই যে ১৯১১ জনের চাকরি বাতিল করা হল, এদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে সিবিআইকে। এদের আজ থেকেই স্কুলে ঢোকা বন্ধ। এদের বেতন বন্ধ করার নির্দেশও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় দিয়েছেন। 


প্রসঙ্গত, গ্রুপ ডি নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত নেমে সিবিআই গাজিয়াবাদ থেকে বেশ কিছু ওএমআর শিট বাজেয়াপ্ত করে সিবিআই। তাতে দেখা যায়, স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে যে সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছে, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে যে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে সেখানেও একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে। ৪ হাজার ৪৮৭ জন ইতিমধ্যে গ্রুপ ডিতে নিয়োগপত্র পেয়েছেন, ২৮২০টি ওএমআর শিট বিকৃত করা হয়েছে। সিবিআই সেই বিস্তারিত তথ্য স্কুল সার্ভিস কমিশনকে দিয়েছিল।


স্কুল সার্ভিস তমিশন পুনরায় সেটা মূল্যায়ন করে আজ কলকাতা হাইকোর্টে হলফনামা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ২৮২৩টি ওএমআর শিট বিকৃত করা হয়েছিল। যার মধ্যে ১৯১১ জন যাঁরা স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে সুপারিশপত্র পেয়েছেন, বাকি সংখ্যাটা নিয়মের কারণে সুপারিশপত্র পাইনি। ফলে, এই ১৯১১ জন যে অবৈধভাবে সুপারিশপত্র পেয়েছেন সেটা স্কুল সার্ভিস কমিশন কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে।


এছাড়া আজ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় স্কুল সার্ভিস কমিশনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন, ২০১৬ সালের যে নিয়োগ প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে এই গ্রুপ ডি স্টাফরা যাঁরা নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছিলেন, ফলপ্রকাশের সময় স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান কে ছিলেন ? স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে বলা হয়, সেই সময় ইতিমধ্যেই হেফাজতে থাকা সুবীরেশ ভট্টাচার্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ, সুবীরেশ ভট্টাচার্যের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছাড়া স্কুল সার্ভিস কমিশনের সার্ভারে নম্বর বিকৃতি বা নম্বর পরিবর্তন হতে পারে না। সুবীরেশ ভটাচার্যের উদ্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ, এই দুর্নীতিতে কোন বড় মাথা রয়েছে, সেই নাম প্রকাশ্যে আনা হোক। সেই নাম যদি তিনি প্রকাশ্যে না আনেন, তাহলে ধরে নিতে হবে এর কিংপিন সুবীরেশ ভট্টাচার্য। নাম প্রকাশ না করলে তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতা বা ডক্টরেট ডিগ্রি ব্যবহার করতে পারবেন না বলেও নির্দেশ দেন। এর পাশাপাশি এও বলা হয়, যদি সুবীরেশ ভট্টাচার্য মনে করছেন যে, নিরাপত্তার কারণে যদি তিনি নাম প্রকাশ করতে পারছেন না, তাহলে প্রয়োজন পড়লে কলকাতা হাইকোর্ট তাঁর পরিবারকে নিরাপত্তা প্রদান করবে।