সন্দীপ সরকার, সঞ্চয়ন মিত্র ও সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: বউবাজারের দুর্গা পিটুরি লেনের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সদস্যদের হোটেলে সরানোর ব্যবস্থা করেছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এখনও পর্যন্ত ৮২ জনকে সরানো হয়েছে। এঁদের মধ্যে এমন মানুষও আছেন, যাঁরা আড়াই বছর আগেও ঘরছাড়া হয়েছিলেন। KMRCL কর্তৃপক্ষ ফিট সার্টিফিকেট দেওয়ায় বাড়িতে ফিরেছিলেন।
কারও চোখে জল! কারও মুখে উৎকণ্ঠার ছাপ! আড়াই বছর পর ফের বাস্তু হারানোর বেদনার ছবি ফিরল বউবাজারের দুর্গাপিটুরি লেনে! বাক্স-প্যাঁটরা হাতে প্রাণভয়ে বাড়ি ছাড়লেন বাসিন্দারা। আপাতত ঘরছাড়াদের ঠাঁই হয়েছে হোটেলে। যেমন দুর্গাপিটুরি লেনের জয়সওয়াল পরিবার। হোটেলের একটি ঘরে ঠাঁই হয়েছে চার জনের পরিবারের।
দুর্গাপিটুরি লেন, বউবাজারের বাসিন্দা ভারতভূষণ জয়সওয়াল বলছেন, ''ডাক্তারের কাছে গেছিলেন। বাড়ি ফিরেই মাথায় হাত। বাড়ি ছেড়ে হোটেলে উঠতে হয়েছে সাউ পরিবারকেও।''
বছর আড়াই আগে ঘরছাড়া হয়েছিলেন! KMRCL কর্তৃপক্ষ ফিট সার্টিফিকেট দেওয়ায় বাড়িতে ফিরেছিলেন। কিন্তু, ফের সেই একই পরিস্থিতি! ফের ঠাঁই হোটেল! কেউ কেউ তো অসুস্থ সদস্যকে নিয়েই বাধ্য হয়ে নিজের ভিটে ছেড়ে উঠেছেন হোটেলে!
ক’দিন হোটেলে থাকতে হবে? ফেরার পর আবার কিছু হবে না তো? কোনও উত্তর নেই! শুধুই উৎকণ্ঠা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেন, "২০১৯-এ যেটা ছিল প্রথম অভিজ্ঞতা, ২০২২-এ সেটা রিপিট হচ্ছে। এগুলো কলকাতার পুরনো বাড়ি। এগুলিকে ইটের বাড়ি বলা হয়। এই বাড়িগুলিতে ফাটল ধরার মূল কারণ, এর যে ভীত সেটা সরতে শুরু করলে তখনই ফাটল হয়। টানেল বোরিং মেশিন যখন আসছিল এদিকে, তখন যে ধরনের কাঁপুনিতে মাটির তলার ভারসাম্য নষ্ট হয়েছিল তাতেই এই বাড়িগুলিতে ফাটল ধরেছিল। আবার সেই সমস্যা হলে বুঝতে হবে একই কারণ রিপিট হয়েছে। এটা দৈবযোগে হয়নি। নির্মাণের কারণেই হচ্ছে। নির্মাণকারী সংস্থা হিসেবে মেট্রো কর্তৃপক্ষ এবং যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। ফাটল কতটা চওড়া, দীর্ঘ তার ওপর নজর রাখতে হবে। যদি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ক্রমশ বেড়ে চলে, তাহলে এই ফাটলগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এই বাড়ির বাসিন্দাদের প্রাথমিকভাবে ৭২ ঘণ্টা নিরাপদে থাকা উচিত।"