কলকাতা: ম্যানহোলকাণ্ডে তিন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় ঠিকাদারকে গ্রেফতার করল কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার পুলিশ। ধৃত আলিমুদ্দিন শেখের বাড়ি মুর্শিদাবাদে। তাঁর বিরুদ্ধে গাফিলতি ও সুরক্ষা ছাড়াই শ্রমিকদের কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এখনও বদলায়নি ঘটনাস্থলের ছবিটা। এই ঘটনায় KMDA-কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র। 


লেদার কমপ্লেক্সে, ম্যানহোলে নেমে, অসহায়ভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন তিনজন। সেই ঘটনায় সোমবার আলিমুদ্দিন শেখ নামে লেবার কন্ট্রাক্টর ও সুপারভাইজারকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের বাড়ি মুর্শিদাবাদে। তাঁর বিরুদ্ধে গাফিলতি এবং পর্যাপ্ত সুরক্ষা ছাড়া কাজ করানোর মামলা করা হয়েছে। তবে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ও তার জেরে তিনজনের মৃত্যুর পরও বদলায়নি এলাকার ছবিটা। কলকাতা লেদার কমপ্লেক্সে ম্যানহোলে পাইপ লাইনের কাজ করতে নেমে মৃত্য়ু হয় KMDA-এর তিন অস্থায়ী শ্রমিকের। ডুবুরি নামিয়ে, চার ঘণ্টা তল্লাশির পর, তাঁদের দেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় শুরু থেকেই প্রশ্ন উঠেছে KMDA-এর ভূমিকা নিয়ে। এদিন কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান প্রশ্ন তুলেছেন, কী করে কোনওরকম সুরক্ষা ছাড়াই তিনজন শ্রমিককে ম্যানহোলে নামিয়ে দেওয়া হল, তা নিয়ে। একই অভিযোগ করেছেন লেদার কমপ্লেক্সের কর্মীদের একাংশও। তাঁদের প্রশ্ন, সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য় করে, দিনের পর দিন মানুষকে মৃত্য়ুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কেন?

কর্মী, কলকাতা লেদার কমপ্লেক্সের কর্মী ভাস্কর নস্কর বলেন, "সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে এখানে সাফাই কর্মীদের এই ম্যানহোলের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে সাফাইয়ের কাজ করছিলেন। এটাকে আমরা তীব্রভাষায় নিন্দা করছি। এদের অক্সিজেন মাস্ক কিছুই দেওয়া হত না। শ্রমিকগুলো প্রশিক্ষিতও নয়। এই কাজের জন্য উপযুক্ত এরা নয়। আমরা বারবার দাবি করছি প্রশিক্ষিত (শ্রমিক) দরকার। এর পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।''

নিয়ম অনুযায়ী, বিভিন্ন ট্যানারি থেকে রাসায়নিক মিশ্রিত ও দূষিত এই জল নির্দিষ্ট নর্দমার মধ্যে দিয়ে একটি ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পৌঁছনোর কথা। কিন্তু তা করতে গেলে কর দিতে হবে ট্যানারি সংস্থাগুলিকে। অভিযোগ সেই কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যই যত্রতত্র দূষিত এই জল বের করে দেওয়া হয়। ভাস্কর নস্করের কথায়, "এটা মারা যাওয়ার মূল কারণটা হচ্ছে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটা হয়েছিল যেখানে জলটা পরিশুদ্ধ করার জন্য ব্যবস্থা ছিল। সেই ব্যবস্থাটা সম্পূর্ণ অকেজো করে দেওয়া হয়েছে। এখন রাস্তাঘাটে চারদিকে জল উঠে গেছে, কাদা উঠে গেছে।''

মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যুর পর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, "খুব অবহেলা হয়েছে। ওখানে কাজের পরিস্থিতি ছিল না। ডিসচার্জ ওয়াটার যেভাবে রাস্তায় জমেছিল একটা নরককুণ্ড। আমি KMDA-কে একটা তদন্ত করতে দিয়েছি। কারা এখানে ছিল, যে ইঞ্জিনিয়াররা দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের কর্তব্য কী ছিল? তাঁদের শ্রমিকরা নামল, ঠিকাদার নামল তাঁদের ভূমিকা কী ছিল, যে ইঞ্জিনিয়াররা উপস্থিত ছিল তাঁরা কোনও আগাম সুরক্ষা ব্যবস্থার কথা বলেছিল কিনা এবং পুলিশও একটা তদন্ত করছে।''


আরও পড়ুন: Elephant Attack: হাতিকে উত্যক্ত করার অভিযোগ, গ্রেফতার আর্থ মুভারের সহ চালক