অনির্বাণ বিশ্বাস, কলকাতা: যেন এক রূপকথা। জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) লাটাগুড়ির (Lataguri) সুজয় দেব ও নকুল দেব। এঁরা প্রতিবেশী, এঁরা বন্ধু।  দু'জনের শরীরেই বাসা বেঁধেছিল একই রোগ- সিরোসিস অফ লিভার।  চেন্নাইয়ের চিকিৎসকরা বলে দিয়েছিলেন প্রতিস্থাপন না করলেই নয়। 


পেশায় পর্যটন ব্যবসায়ী সুজয়কে লিভার দিয়ে নতুন জীবন দিয়েছিলেন স্ত্রী। সোনারপুরের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ লিভার অ্যান্ড ডায়জেসটিভ সায়ন্সেসে ১৮ মে লিভার প্রতিস্থাপন হয় তাঁর। তাঁরই দেখানো পথে ২২ ডিসেম্বর সেখানেই লিভার প্রতিস্থাপন হল নকুলের। 


লাটাগুড়ির বাসিন্দা সুজয় দেবের কথায়, 'এই রোগের সঙ্গে লড়াই করতে করতে যখন হাঁপিয়ে উঠেছিলাম তখন আইআইএলডিএসে এসেছিলাম।  ভাবতে পারিনি, এভাবে আবার আমি আমার নতুন জীবন ফিরে পাব, সবার সঙ্গে কথা বলব। এনাদের পরিষেবা এত ভাল। আজকে বন্ধুকে নিতে এসেছি। এটা আমার কাছে বিশাল ব্যাপার। বন্ধুকে নিতে আসা শুধু নয়, একজনের নতুন প্রাণ নিয়ে ফিরতে পাচ্ছি । এটা আমার কাছে বড় পাওনা।সম্পর্ক মজবুত ছিল বলেই আমার স্ত্রী আমার জীবন ফিরিয়ে এনেছে'।


লিভার প্রতিস্থাপিত রোগী নকুল দেব বলছেন, 'খুবই আনন্দ হচ্ছে। খুব ভাল। আরও লোকজন আসবে, আমরা আরও লোক পাঠাব। ময়নাগুড়ি থেকে অলরেডি লোকজন আসতে শুরু করেছে। এই সাফল্যের পথ মোটেই সহজ ছিল না, বলছে খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 


লিভার ফাউন্ডেশনের সম্পাদক পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বলছেন, 'আমাদের লিভার ফাউন্ডেশন আগেই সিদ্ধান্ত নিই যে আমরা এখানে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করব। এটা আরও একটু আগেই শুরু হতে পারত কিন্তু করোনার জন্য পিছিয়ে গিয়েছে। প্রথম ট্রান্সপ্লান্ট ১৮ই মে সাকসেসফুল হয়। দ্বিতীয় ট্রান্সপ্লান্ট ২২ ডিসেম্বর সেটাও সাকসেসফুল হয়। দুটোই হয়েছে লাইভ লিভার ট্রান্সপ্লান্ট। কঠিন কাজ কিন্তু সফল হয়েছি আমরা। আমাদের এটা অলাভজনক হাসপাতাল এবং আমার মনে হয় ভারতবর্ষের মধ্যে আমরা খুব সফল হব লিভার ট্রান্সপ্লান্টের জন্য।


দুই সফল অস্ত্রোপ্রচার হওয়া রোগীর জন্য এদিন এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী এবং জি কে ঢালি।


ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ লিভার অ্যান্ড ডায়জেসটিভ সায়ন্সের ডিরেক্টর অশোকানন্দ কোনার বলছেন, ' একটা পর্যায়ে গেলে এটাকে আমরা বলি যে ডি কমপেনসিটেড লিভার ডিজিজ, তখন ট্রান্সপ্লান্ট করা ছাড়া উপায় থাকে না। বাড়ির লোকজনকে যাদের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে তাঁদের মধ্যে যদি দাতা পাওয়া যায় তাহলে সেটা করা সম্ভব। হাসপাতাল এবং পরিকাঠামো কিন্তু এখন অনেকটাই তৈরি হয়ে গিয়েছে। ধীরে ধীরে এভাবেই এগোতে হবে। আজকে কলকাতা পরে বর্ধমান তারপরে শিলিগুড়ি তারপর আসানসোল তাহলেই হয়ে গেল আপনার।


সুজয়ের ক্ষেত্রে লিভার প্রতিস্থাপনে খরচ হয়েছিল ১৩ লক্ষ টাকা। যার মধ্য়ে ৩ লক্ষ টাকার খরচ বহন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, নকুলের খরচ হয়েছে ১৪ লক্ষ টাকা। ভিন রাজ্যে এরকম লিভার প্রতিস্থাপনের খরচ পড়ে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা।