কলকাতা: গড়ে উঠেছিল কয়েক বছর ধরে। কিন্তু মাত্র ন'সেকেন্ডে ধুলোয় মিশে গিয়েছে নয়ডার জোড় টাওয়ার (Noida Twin Tower Demolition)। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার তৎপরতা শুরু হয়েছে কলকাতা পুরসভায় (Kolkata Municipal Corporation)। বেআইনি প্রোমোটিং রুখতে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার-সহ বিভিন্ন বিভাগে আরও পদ তৈরি করার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। বেআইনি নির্মাণ এবং অসাধু প্রোমোটারদের দাপট রুখতেই এমন উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন শহর কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)।
নয়ডার জোড়া টাওয়ার ভেঙে ফেলার ঘটনায় তৎপরতা কলকাতা পুরসভাতেও
মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে এ কথা জানিয়েছেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, ''ওই বহুতল ব্লাস্টের পর অসাধু প্রোমোটারদের সাবধান হয়ে যাওয়া উচিত। কারণ সুপ্রিম কোর্টের অর্জারে ওখানে যদি এটা হয়ে থাকে, এখানেও হতে পারে। অসাধু প্রোমোটিং বন্ধ করতে বিল্ডিং বিভাগে আমরা নজরদারি বাড়াব। কার আমি চাই না, যে মানুষগুলি ফ্ল্যাট কিনছেন, তাঁরা কোনও বিপদে পড়ুন।''
ফিরহাদ আরও বলেন, "ওখানে ৯২৪টি ফ্ল্যাট খালি করতে হয়েছে জানেন! বিল্ডিং কেনার আগে পুরসভায় খোঁজ নিন। এখন সব আমাদর ওয়েবসাইটে রয়েছে। কোন বিল্ডিং অনুমোদিত, কোনটা নয়, সব তথ্য রয়েছে। আমাদের পুরসভাকেও এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে, যাতে অসাধু প্রোমোটিং না হয়। তাই বিল্ডিং বিভাগকে আরও শক্তিশালী করছি।"
দীর্ঘ ন'বছরে আইনি লড়াইয়ের শেষে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মাত্র ন'সেকেন্ডে ধ্বংস করা হয়েছে নয়ডার সেক্টর 93A-র বেআইনি জোড়া বহুতল। তার পর এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে কংক্রিটের ধ্বংসাবশেষ। বিস্ফোরণের ফলে প্রায় ৮০ হাজার টন জঞ্জাল তৈরি হয়েছে, যা সরাতে সময় লাগবে অন্তত ৩ মাস। গতকাল থেকেই ফিরতে শুরু করেছেন আশেপাশের আবাসনের বাসিন্দারা। তার আগে আবাসনগুলির বিদ্যুৎ, লিফট, গ্যাস সরবরাহের লাইন পরীক্ষা করা হয়। নির্মাণ সংস্থা সুপারটেক লিমিটেডের দাবি, অ্যাপেক্স ও সিয়ান নামে যমজ বহুতল ভেঙে ফেলায় সব মিলিয়ে ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
তবে বহুতল ভেঙে ফেলার ফলে টাকাপয়সার ক্ষয়ক্ষতি যা হয়েছে, তা হয়েইছে, পরিবেশের উপর আগামী দিনে এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে চলেছে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা। প্রায় ৪ হাজার কেজি বিস্ফোরক ব্যবহার করে বহুতল গুঁড়িয়ে দেওয়ার ফলে ইতিমধ্যেই আশেপাশের কিছু নির্মাণে ফাটল দেখা দিয়েছে। যে সমস্ত বাড়িতে ফাটল দেখা যায়নি এখনও পর্যন্ত, তার ভিত নড়বড়ে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
৮০ হাজার টনের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ৫০ হাজার টন জোড়া টাওয়ারের বেসমেন্টেই পুঁতে দেওয়া হবে। বাকি ৩০ হাজার টনকে টাইলসে পরিণত করা হবে। কিন্তু ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কারের সময় ধুলোর ঝড় এবং বেসমেন্টে জমা ধ্বংসাবেশষ থেকে ভূগর্ভস্থ জলের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে নিয়ে গিয়ে যেখানে ফেলা হবে, সেখানকার জমিতে আগামী দিনে চাষবাসও করা যাবে না বলে মত তাঁদের।
জোড়া টাওয়ার ধ্বংসের পর পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা
পেল্লাই নির্মাণ ভেঙে ফেলার পর জল এবং বাতাসের সঙ্গে মিশে গিয়ছে সূক্ষ্ম ধূলিকণা। তাতে সিমেন্ট, বালি, কাঁকড়, চুন, কাঠের গুঁড়ো, তামা, পলিভিনাইল ক্লোরাইড এবং সর্বোপরি বিস্ফোরকে ব্যবহৃত উপাদানও রয়েছে, মানবশরীরের জন্য যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর ফলে আগামী দিনে দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকার মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা, ক্যানসার, হৃদরোগে এবং স্টমাক আলসারের মতো রোগ বাড়বে বলে আশঙ্কা।