অনির্বাণ বিশ্বাস, পার্থপ্রতিম ঘোষ ও শিবাশিস মৌলিক, কলকাতা : গুলশন কলোনিতে গুন্ডারাজ। ঘটনায় গ্রেফতার আরও এক। এখনও পর্যন্ত মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হলেও মূল অভিযুক্ত সহ অধরা বাকিরা। পুলিশ খুঁজে না পেলেও ঘটনার পর সোশাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট মূল অভিযুক্ত মিনি ফিরোজের। বোঝাই যাচ্ছে, পুলিশকেই হুমকি দিচ্ছে মিনি ফিরোজ, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? প্রশ্ন তুলছেন গুলশন কলোনির বাসিন্দারা।
ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে ফিল্মি ডায়লগ, ক্যামেরার সামনে ফিরোজ খান। নাম শুনে বলিউড স্টার বলে ভুল হতেই পারে। কিন্তু এই ফিরোজ খান আসলে মিনি ফিরোজ। গুলশন কলোনির গ্যাংস্টার। গুলশন কলোনিতে দুষ্কৃতী তাণ্ডবের ঘটনায়, মূল অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে মিনি ফিরোজের নাম। ঘটনার পর এখনও পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হলেও অধরা মূল অভিযুক্ত-সহ বাকিরা। FIR-এ নাম রয়েছে, পুলিশের খাতায় 'পলাতক' হলেও, শুক্রবার সোশাল মিডিয়ায় এই রিল পোস্ট করে মিনি ফিরোজ। শুধু তাই নয়, যে ফিরোজ খানকে নাকি খুঁজে পায়নি পুলিশ, তার খোঁজ পেয়েছে এবিপি আনন্দ। অভিযুক্ত স্বীকার করে নিয়েছে, ঘটনায় জড়িত তার দলবলই।
ফিরোজ খান (মিনি ফিরোজ) বলে, "ছেলেটার নাম সাজিদ। আমার পাশের বিল্ডিংয়ে থাকে। আমি তার বাড়িওয়ালা। আমি ওকে ছোটভাই মনে করি। করে যখন ফেলেছে আর কী বলব। বোকা ছেলে। আমি আইন মেনে কাজ করছিলাম।...ওর মাথায় কী যে চলছিল, যার জন্য় ও এটা করেছে। আমি ওকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে রাখি। যা করে ফেলেছে তা নিয়ে কিছু বলার নেই।"
পুলিশ হদিশ না পেলেও নিজের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে ফিরোজ খান। সে বলে, "বড় ভাই রয়েছেন, তাঁর নাম মহম্মদ আনওয়াজ খান। আমাকে এক সপ্তাহ, দশদিন আগে ফোন করেছিল, বলল যে আমি বিহার যাব ১১ তারিখ। তোমার তো কাজ রয়েছে, তুমি যাবে? আমি পালিয়ে যাইনি। কিছু কাজে এসেছিলাম। সেই কাজ হয়নি। আমার কাজ হয়ে গেলে কলকাতা চলে আসব।"
গুলশন কলোনির বিরিয়ানি দোকানের মালিক মীরাজ খান বলেন, "এটা পুলিশ বুঝুক। এটা তো পুলিশকে খোলা চ্যালেঞ্জ আছে। পুলিশ বুঝুক, পুলিশ কী করবে।"
বৃহস্পতিবার সন্ধে পৌনে সাতটা থেকে ৭টা ১০ মিনিট-- মাত্র ২৫ মিনিটের মধ্যে গুলশন কলোনির তিন জায়গায় তাণ্ডব চালায় দুষ্কৃতীরা। ঘটনার ২ দিন পরও থমথম করছে এলাকা। আতঙ্কে বাসিন্দা থেকে ব্যবসায়ীরা। গুলশন কলোনির বাসিন্দা মেহরাবউদ্দিন খান বলেন, "পিছনে কে আছে সেটা তো এখন বুঝতে পারছি না। কেউ না কেউ তো আছে পিছনে। আগে আছে তো সেও সাইড হয়ে যাবে। পুলিশ প্রশাসন ঠিক করে কাজ করলে সব সাইড হয়ে যাবে।"
প্রশ্ন উঠছে, তাণ্ডবের মাস্টারমাইন্ড মিনি ফিরোজ যেখানে সোশাল মিডিয়ায় সক্রিয়, জানিয়ে দিচ্ছে নিজের অবস্থান, সেখানে পুলিশ তার হদিশ পাচ্ছে না কেন?
বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, "পুলিশ হয়তো রিল দেখছে, আনন্দ উপভোগ করছে, AC রুমে বসে। পুলিশ ধরবে না তো। তার ওপরে বিধায়ক জাভেদ খানের নাকি হাত আছে বলে শোনা যাচ্ছে, লোকজন বলছে। স্বাভাবিকভাবে পুলিশের ক্ষমতা হবে তাকে ধরার জন্য? পুলিশের সেই মেরুদণ্ড নেই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের।"
১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ বলেন, "এখানকার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তারা রাত্রে নিজেরা পাহারা দেবে। দেখবে, কোনও দুষ্কৃতী এখানে কিছু রছে কিনা। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সেই কাজটা তারা করবে।"
বৃহস্পতিবার দুষ্কৃতীরা যেখানে তাণ্ডব চালিয়েছিল, শনিবার সেখানেই হয় ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি। উপস্থিত ছিলেন ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ।