পার্থপ্রতিম ঘোষ, অনির্বাণ বিশ্বাস ও  শিবাশিস মৌলিক, কলকাতা : গুলশন কলোনিতে গুন্ডারাজ। ফের এলাকা দখলের মরিয়া লড়াই ! বেআইনি নির্মাণ থেকে ভোটে সাহায্য় নেওয়ার অভিযোগ। ছবি দেখিয়ে তৃণমূল কাউন্সিলরকে নিশানা মিনি ফিরোজের। আগে চিনতাম না, পরে ওর বিষয়ে জেনে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিই। পাল্টা সুশান্ত।

বেপরোয়া। নির্ভয়। ফের এলাকার দখল নিতে মরিয়া। গুলশন কলোনির বাসিন্দাদের দাবি, তার কলকাঠিতেই খাস কলকাতার বুকে হয়েছে সশস্ত্র তাণ্ডব। দফায় দফায় গুলি-বন্দুক নিয়ে তাণ্ডব, বোমাবাজি। ভর সন্ধ্যায় খাস কলকাতার বুকে দুষ্কৃতী তাণ্ডব। আর সেই তাণ্ডবের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে উঠে আসছে একটি নাম। ফিরোজ খান, ওরফের মিনি ফিরোজ। মূল অভিযুক্ত হিসেবে FIR-এ নাম রয়েছে তার। পুলিশের খাতায় যে এখনও ফেরার, সেই ফিরোজই ক্ষোভ উগরে দিয়েছে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। 

ফিরোজ খান বলে, "কসবা থানায় গিয়ে দেখুন, সুশান্তকুমার ঘোষের নামে কত অভিযোগ। যে দলে রয়েছেন সেই দলের মহিলা কাউন্সিলরকে বিরক্ত করেন। আমি যদি বড় অপরাধী হই তাহলে ভোটে আমার থেকে সাহায্য় নিলেন কেন কাউন্সিলর ? সবাই জানে, আমার ছবিও রয়েছে, নিজের পাশে আমাকে বসিয়েছেন।" এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ বলেন, "একসময় এরা কর্তৃত্ব করত এই অঞ্চলে। ১০-১২টা ক্রিমিনাল এক সময় গুলশনকে নিয়ন্ত্রণ করত। গত চার বছর ধরে সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে একটা আক্রোশ থেকেই যায়।"

স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল  পর্যন্ত গুলশন কলোনির দখল ছিল মিনি ফিরোজের হাতে। খাস জমি, মাছের ভেড়ির দখলদারি, পুকুর ভরাট করে বেআইনি নির্মাণ থেকে তোলাবাজি  - সব কিছুতেই চলত তার সিন্ডিকেট। 

স্থানীয় সূত্রে আরও খবর, গোষ্ঠী বিবাদের কয়েক বছর এলাকা ছাড়া থাকার পর, সম্প্রতি এলাকায় ফেরার পাশাপাশি, পুরনো দখলদারির ক্ষমতা ফিরে পেতে চাইছে মিনি ফিরোজ ও তার দলবল। লক্ষ্য, খাস জমি, ভেড়ি থেকে বেআইনি নির্মাণ।

বৃহস্পতিবার গুলশন কলোনির যে বিরিয়ানির দোকান সংলগ্ন এলাকায় অস্ত্রহাতে দাপাদাপি চলে, তা মিনি ফিরোজের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের দখলে থাকে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। গুলশন কলোনির স্থানীয় বাসিন্দা মিনহাজ শেখ বলেন, "কোচিং সেন্টার খুলে ফেলেছে এলাকায়। কোন জিনিসের ? গুন্ডা-বদমাস ট্রেনিং সেন্টার। অবৈধ নির্মাণ ওর হাতে ছিল। জমি দখল করা করা, বিল্ডিং নির্মাণ করা, সিন্ডিকেট চালানো, ধরে নিন একটা সাম্রাজ্য বানিয়ে রেখেছিল।"

পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলছেন এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা হাসনাত আলি খান বলেন, "দু'বার আমাকে ধমকি দিয়েছে, বেশি বাড়াবাড়ি করছিস, তোর দাদা কিছু করতে পারবে না। হাত-পা ভেঙে দেব।  পুলিশ তো অ্যাকশনই নিচ্ছে না। খালি বলছে, (গায়ে) হাত দেবে তারপর, অ্যাকশন নেব। ওকে ফোন করছে (পুলিশ), কী রে তুই ওই ছেলেকে ধমকি দিয়েছিস, না আমি তো কিছু বলিনি। আগে ব্যবস্থা নিলে এই ঘটনা ঘটত না।" 

প্রশ্ন হচ্ছে, এত সাহস কোথা থেকে পাচ্ছে দুষ্কৃতীরা? বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী  সুকান্ত মজুমদার বলেন, "গুলশন কলোনির বিষয়টিতো আগেও সবার সামনে এসেছিল। ওখানে রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি মুসলিম তাদের আখড়া। প্রায় ৩ হাজার ভোটার। জনসংখ্যা হচ্ছে প্রায় ২ লাখ। কী ভয়ঙ্কর বোমের উপর বসে আছি বুঝতে পারছেন ?" 

তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, "মিনি হোক, ম্যাক্স হোক, আল্টা-প্রো ম্যাক্স হোক, যে ম্যাক্স হোক, যে ম্যাক্স থাকুক...যেদিন ধরা পড়বে, স্থান হবে জেলের পিছনে। পুলিশ পিছনে রয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে। জেলের পিছনে থাকবে।"

FIR-এ নাম থাকা মিনি ফিরোজ আছে রিলে, আছে রিয়েলে। কিন্তু পুলিশের খাতায় সে 'ফেরার'!