কলকাতা: সংঘাতের আবহেই উপাচার্যদের রাজভবনে তলব করলেন রাজ্যপাল (Governor)। নিয়োগ-বিতর্কের (Recruitment Controversy) মধ্যেই উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করছেন সি ভি আনন্দ বোস। বৈঠকে যোগ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu) ও শিক্ষা দফতরের সচিব। এদিন বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'একই সূত্রে কাজ করবে রাজভবন ও নবান্ন। শিক্ষাকে সংঘাতহীন করতে হবে।' 


সংঘাত না সন্ধি? রাজ্য়পাল এবং রাজ্য় সরকারের সম্পর্ক ঠিক কোন খাতে বইছে? নতুন করে সেই জল্পনা উস্কে দিল সাম্প্রতিককালে কার্যত নজিরবিহীন এই ছবি। উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য় বসুকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করলেন রাজ্য়পাল সি ভি আনন্দ বোস। গত কয়েকদিনের সংঘাতের আবহে যা নতুন মোড় বলেই মনে করছেন অনেকে। সি ভি আনন্দ বোস রাজ্য়পাল হয়ে আসার পর, নবান্নর সঙ্গে রাজভবনের সম্পর্ক মসৃণই ছিল।


প্রসঙ্গত, আংশিক সংঘাত শুরু হয়েছিল আগেই! নিশীথ প্রমাণিক ইস্য়ুতে রাজভবন কড়া বিবৃতি জারি করতেই দলীয় মুখপত্রে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করল তৃণমূল। আর তারমধ্য়েই রাজ্যপালকে সরাসরি অবশ্যই বেনজির বিতর্কিত আক্রমণ শানালেন মদন মিত্র। কামারহাটির বিধায়ক বলেন, 'এরা সবাই বিজেপির রাজ্যপাল, এই রাজ্যপাল ভেবেছিল আস্তে আস্তে সিঁধ কাটব...আমরা আ,আ,কখ শিখিয়েছি, রাজ্যপাল ভুলে গেছেন, অ,আ,ক,খ শিখেছেন, ক্যাট-ব্যাট শেখেননি। আমাদের পিছনে বাঁশ দিলে, আমরাও ছুলে দেব।' 


শনিবার বিজেপি সাংসদ অমিত শাহের ডেপুটি নিশীথ প্রামাণিকের কনভয়ে হামলার অভিযোগ, ওঠা মাত্র তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। প্রতিবাদে মুখর বিজেপি।



শনিবারই এই ইস্যুতে রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানান দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি ইতিমধ্য়েই ৩৫৫ কিংবা ৩৫৬ ধারা জারির দাবি জানাচ্ছে। এই অবস্থায়, রবিবার রাজভবনের তরফে কড়া বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, রাজ্যে কখনও কোথাও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হলে রাজ্যপাল চুপ থাকবেন না। বরং শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে কঠোর ও কার্যকরী পদক্ষেপ করা হবে। পাল্টা সোমবার তৃণমূলের দলীয় মুখপত্রে ঝাঁঝালো সমালোচনা করে বলা হয়েছে, 


রাজ্যপাল যে আসলে বিজেপিরই গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়িত করার প্রতিনিধি, তা প্রমাণ করেছিলেন জগদীপ খনকড়। প্রাক্তন রাজ্যপালের পথ দ্রুত অনুসরণ করার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন বর্তমান রাজ্যপাল। নবান্নকে সতর্ক করে দিয়ে রাজ্যপাল বলেছেন, আইনের শাসন বজায় রাখতে ও দুষ্কৃতীদের মোকাবিলায় অবিলম্বে ক়ড়া পদক্ষেপ করবে রাজ্য সরকার। ভবিষ্যতে যে কোনও সমস্যার মোকাবিলায় সময়মতো পদক্ষেপ করা হবে। রাজভবনের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, যাঁরা আইন হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। হিংসাকে নির্মূল করতে হবে। বাংলার মানুষ আশা করেন, পুলিশ ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তারা, প্রত্যেকে নির্ভয়ে ও নিরপেক্ষভাবে তাঁদের দায়িত্ব পালন করবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে কোনওরকম শিথিলতা, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য তৈরি বলে, তা কখনই মেনে নেওয়া হবে না। 


এই প্রেক্ষাপটে পাল্টা তৃণমূলের মুখপত্রে বলা হয়েছে, রাজ্যপালের দাবি অভিযুক্তদের শাস্তি দিতে হবে। এখানেই উঠেছে প্রশ্ন। রাজ্যপাল একতরফা বিজেপির কথা শুনে বিবৃতি দিচ্ছেন। গোপন তদন্ত বলতে রাজ্যপাল কী বুঝিয়েছেন? শুধু নিশীথ প্রমাণিকের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেলেন? রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন না? জানবেন না আসল পরিস্থিতি কী ছিল? রাজ্যপাল সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে নিরপেক্ষ আচরণ করবেন, এটাই বাংলার জনগণ চাইছেন।


জগদীপ ধনকড় রাজ্যপাল থাকাকালীন, তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছিল। এবার সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের সম্পর্ক এবার কোন খাতে বয়, সেদিকেই নজর সকলের।