কলকাতা: নবমীর পুজো ঘিরে আজ সকাল থেকেই উত্তর কলকাতার চোরবাগানের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে (Chorbagan Sarbojanin Chatterjee Family) ব্যস্ততা তুঙ্গে৷ পুজোর বয়স ১৬৩। চট্টোপাধ্যায় পরিবারে মায়ের ভোগ রান্ন করেন পুরুষরা। আমিষ,নিরামিষ, নানারকম পদ হয়। পরিবেশনেরও বিশেষ রীতি রয়েছে। নবমীর মেনুতে থাকে, মাছের নানারকম পদ, পোলাও, খিচুড়ি,  বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি। 


 আজ শহরের একাধিক অন্যতম বনেদির বাড়ির পুজোগুলিতে ভোগে আজ রান্না হচ্ছে নানা পদ।বাগবাজার সর্বজনীনেও ( Bagbazar Sarbojanin) আজ ভোগের আয়োজন। নবমীর মেনুতে রয়েছে, সাদা ভাত, শুক্তো, অড়হর ডাল, সঙ্গে পোস্তর বড়া। এছাড়াও, মাকে নিবেদন করা হয় পোস্তর তরকারি, চালকুমড়োর ঘণ্ট, কাঁচা তেঁতুলের চাটনি, নানা রকমের মিষ্টি ও পায়েস। মুখশুদ্ধি হিসেবে মাকে দেওয়া হয় পান। পাশাপাশি নবমীতে বেলুড় মঠেও বিশেষ পূজার্চনা। ভোর সোয়া ৫টায় পুজো শুরু হয়েছে। দুপুরে বিশেষ হোমযজ্ঞ হবে ২ ঘণ্টা ধরে। দেওয়া হয় চালকুমড়ো, শসা, কলা-সহ ফল বলি। এর মধ্যেই অঞ্জলি দেওয়া চলবে। এরপর খিচুড়ি ভোগ বিতরণ করা হবে। অপরদিকে, কলকাতার বনেদি বাড়িগুলির অন্যতম শোভাবাজার রাজবাড়িতে প্রথা মেনে নবমীতে হোম, বলি, আরতি, বিশেষ পুজো শুরু হয়েছে। শোভাবাজার রাজবাড়িতে অন্নভোগের প্রচলন নেই। তার পরিবর্তে চাল, কলা, দুধ, মিষ্টি আর সন্দেশ দিয়ে দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয়। বলি দেওয়া হয় আখ, চালকুমড়ো, মাগুর মাছ। বলির পর আরতি। এরপর অঞ্জলি। বিকেলে মিছরি, জল ও মাখন দিয়ে দেবীকে শীতল ভোগ। রাতে শুকনো মিষ্টি সহযোগে মিঠাই ভোগের আয়োজন। 


প্রসঙ্গত, করোনা-আতঙ্ক কাটার পর এবার বেলুড় মঠে ভক্তের ঢল। পুজোর ক’দিন সারাদিন খোলা রয়েছে মঠের দরজা। উল্লেখ্য, নবমী নিশি ফুরোলেই তো পুজো শেষ। তাই মন খারাপ করা নবমীর আগে উত্‍‍সবের সুরে ভাসতে তৈরি তিলোত্তমা৷ গতকাল মহাঅষ্টমীর সকালে কুমারী পুজোকে ঘিরেই জমে ওঠে৷ বেলুড় মঠে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে কুমারীপুজো। এরপর মণ্ডপে মণ্ডপে পুষ্পাঞ্জলি, মাইকে স্তোত্রপাঠ৷ তাই শুনে শুনেই কারও বা মনে মনেই অঞ্জলি দেওয়া৷ দুপুর পেরোলেই সন্ধিপুজো। অষ্টমী পেরিয়ে নবমীতে প্রবেশ।হাতে আর মাত্র ১ দিন৷ তাই উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম-সর্বত্রই উত্সবের আনন্দের ঢেউয়ে গা ভাসাতে তৈরি সবাই।  বেলা বাড়তেই সঙ্গে সঙ্গেই মণ্ডপে মণ্ডপে বাড়বে রঙিন জামা-কাপড়ে সাজা মানুষের ভিড়।  বড়দের হাত ধরে ভিড়ের মাঝে কচি-কাঁচারাও৷ শুধু তো ঠাকুর দেখা নয় সঙ্গে দেদার আড্ডা, খাওয়া দাওয়া৷ 


আরও পড়ুন, মহানবমীতে সাড়ম্বরে কুমারী পুজো সার্বণ রায়চৌধুরীদের বড় বাড়িতে


১০৪ বছরে পা দিল বাগবাজার (Bagbazar) সর্বজনীনের পুজো (Durga Pujo)। বর্তমান থিমের জোয়ারে গা না ভাসিয়ে, বরাবরই সাবেকিয়ানাকেই সঙ্গী করে তারা। এবারও সাবেকি প্রতিমায় ডাকের সাজ বাগবাজার সর্বজনীনের পুজোয়। উত্তর কলকাতার এই পুজোর পরতে পরতে জড়িয়ে ইতিহাস। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এই পুজোর সূচনা। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, নলিনীরঞ্জন সরকার-সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। সকাল থেকেই মানুষের ভিড় বাগবাজার সর্বজনীনের পুজোয়। পাশাপাশি লাঠি খেলার মাধ্যমে বাগবাজার সর্বজনীনে বীরাষ্টমী প্রথা পালন চলছে। পরাধীন দেশে লাঠি এবং তরোয়াল খেলার মাধ্যমে শরীরচর্চা করতেন বিপ্লবীরা। পরে তা মাতৃ আরাধনার অঙ্গ হয়ে যায়। সেই প্রথা মেনে বাগবাজার সর্বজনীনে এবারও মহাষ্টমীতে লাঠি খেলার আয়োজন করা হয়।