পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা: বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনায় শিউরে উঠছে কলকাতা। শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড় থেকে অনতিদূরেই আর জি কর হাসপাতাল। রোগী থেকে পরিজনদের, হাসপাতাল কর্মী, চিকিৎসক, নার্সে রাতেও জনবহুল থাকে চত্বর। অথচ শহরের সেই হাসপাতালেই কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন! যা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। এরই মধ্যে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম সঞ্জয় রায়।
সূত্র হেডফোন!
পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনাস্থলে মেলে ব্লু টুথ হেডফোন। সিসিটিভি-তে দেখা যায় গলায় হেডফোন ঝুলিয়ে সেমিনার রুমে ঢুকছে সঞ্জয়। ৩০ মিনিটের ব্যবধানে সেমিনার রুম থেকে বেরনোর সময় হেডফোন ছিল না সঞ্জয়ের কাছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, সঞ্জয় বহিরাগত হলেও, হাসপাতালে তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল। RG কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার রুমে পড়েছিল একটি ব্লু-টুথ হেডফোনের ছেঁড়া তারের অংশ, সেটি সঞ্জয় রায়ের, সেই সূত্রেই তাঁকে আটক করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর। মৃতার দেহের পাশের ওই তার ধরেই চলছিল সূত্র খোঁজার কাজ। সেই সূত্র ধরেই সঞ্জয়কে এদিন গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে এও জানা যায়, এই ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে।
গতকাল টালা থানায় নির্যাতিতার বাবার করা অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষণ ও খুনের মামলা রুজু করা হয়। তবে এই ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত থাকতে পারে বলে পুলিশের অনুমান। আরজি করে পৌঁছলেন ডিসি নর্থ অভিষেক গুপ্তা।
গতকাল থেকে লালবাজারের উচ্চপদস্থ কর্তারা হাসপাতালে থাকেন। হোমিসাইড শাখার পাশাপাশি উইমেন্স গ্রিভান্স সেলের সদস্যরাও ছিলেন। যে সেমিনার রুমে এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটে, সেখানে সিসিটিভি ফুটেজ না থাকায় পারিপার্শিক তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেন পুলিশ কর্তারা। কারা ছিল সেই সময়, কখন এই রুমে আসা হয়, সেই তথ্য জানার চেষ্টা করেন তাঁরা। একাধিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেই সূত্র ধরেই প্রাথমিকভাবে সঞ্জয়কে আটক করে পুলিশ। নিয়ে যাওয়া হয় লালবাজারে। এরপর আজ সকালেই তথ্যের অসঙ্গতি এবং হেডফোনের তারের সূত্র ধরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
কী ঘটেছিল?
বৃহস্পতিবার রাতে 'On Call'-এ ছিলেন মহিলা চিকিৎসক। রাত দুটো নাগাদ তাঁর ডিউটি শেষ হয়। তারপরে জুনিয়রদের সঙ্গে ডিনার সারেন। এরপর জরুরি বিভাগের চারতলায় 'চেষ্ট ডিপার্টমেন্টে'র সেমিনার হলে বিশ্রামের জন্য ঢুকে যান। শুক্রবার সকালে সেই সেমিনার হল থেকেই উদ্ধার হয় তাঁর মৃতদেহ। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, মহিলা চিকিৎসককে যৌন নির্যাতনের চিহ্ন মিলেছে। তাঁর মৃতদেহ পড়ে ছিল ম্য়াট্রেসের ওপর। ম্য়াট্রেসে রক্তের দাগ মিলেছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মৃত মহিলা চিকিৎসকের দু'চোখ দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়েছিল। গোপনাঙ্গে রক্তের চিহ্ন এবং মুখে নখের দাগ মিলেছে। ঘাড়ে, পেটে এবং ঠোঁটের ওপর আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। বাঁ পায়ের গোড়ালি এবং ডান হাতের অনামিকায় ক্ষতচিহ্ন ছিল। এই ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। লালবাজারের তরফে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে