কলকাতা: গ্রেফতার হওয়া কুন্তল ঘোষের (Arrested Kuntal Ghosh) কাছ থেকে প্রায় প্রত্যেকদিন নতুন নতুন চরিত্রের (New Charecter) কথা উঠে আসছে। এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে একটা রহস্যও (Mystery) লুকিয়ে থাকে, যার সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে সোমা চক্রবর্তী (Soma Chakraborty)। এবার সেই কুন্তল ঘনিষ্ঠ সোমা চক্রবর্তীই দক্ষিণ কলকাতার (South Kolkata) একটি ফ্ল্যাটে এবিপি-কে দিলেন একান্ত সাক্ষাৎকার (Interview)। 


আপনার নাম প্রথম কুন্তল ঘোষের মাধ্য়মে জানা গিয়েছিল। ইতিমধ্য়েই ইডি জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল। ঠিক কীভাবে যোগাযোগ হয় আপনার সঙ্গে কুন্তলের ?


উচ্চারণে আধো হিন্দি টান। ক্যামেরায় মুখ না দেখিয়ে পিছন ফিরে বসে, সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে সোমা চক্রবর্তী বলেন, 'একজন কমন ফ্রেন্ডের মাধ্যমে ওর সঙ্গে যোগাযোগ হয় আমার। এমনকি আমার ওর সঙ্গে ভাল বন্ধুত্ব ছিল। ভাল মতোই পরিচয় ছিল। যেরকম একটা নর্ম্যাল ফ্রেন্ডশিপ হয়, সেরকমই ফ্রেন্ডশিপই ছিল।'


কত সাল থেকে কুন্তলের যোগাযোগ হয় ? 


২০১৭ সালের শেষ থেকে ওর সঙ্গে যোগাযোগ হয়, বলে উত্তরে জানান কুন্তল ঘনিষ্ঠ সোমা চক্রবর্তী।


ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, কুন্তল ঘোষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের একটা বড় অংশ আপনার অ্যাকাউন্টে এসেছে। এবং সেটা ২০১৭ সালের পর থেকে ধাপে ধাপে এসেছে। এই সম্পর্কে কী বলবেন ?


সোমা বলেন, আমি শেষ ১০ বছর ধরে ব্যবসা করি।  ওর সঙ্গে যখন আমার পরিচয় হল, তখন ও অনেকদিন ধরেই লক্ষ্য করেছে যে, আমি একজন বিজেনেস উম্যান। আমি বিজনেস করেই খাই। তখন আমার একটা ক্রাইসিস প্রিওড চলছিল। ও তখন সেটা বুঝে ওই অ্যামাউন্ট একটা লোন হিসেবে দেয়। 


মোট কত অ্যামাউন্ট দিয়েছিল ?


ওই প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। বলেন সোমা। 


ইডি সূত্রে খবর, আপনার অ্যাকাউন্টে যখন টাকাটা এসেছে, বিভিন্ন কিস্তিতে এসেছে। এবং আপনার অ্যাকাউন্ট কিছুদিন থাকার পরে আরও একাধিক অ্যাকাউন্টে ছড়িয়ে গিয়েছে। 


এই তথ্যের ব্যাক্ষা দিতে গিয়ে সোমা বলেন, আমি বিজনেস করি, তো ব্যবসা সূত্রে অনেক অ্যাকাউন্টেই ওটা ডিস্ট্রিবিউট হয়। আমার ইনভেস্টমেন্ট পারপাসেই ওটা ইউজ হয়েছে।


আপনি বলেছেন এই টাকাটা আপনি লোন হিসেবে নিয়েছিলেন, পরে কি এই টাকাটা কুন্তলকে ফেরত দিয়েছিলেন কিংবা কুন্তল কি ফেরত চেয়েছিল?


আসলে ২০১৮ এর মাঝামাঝি ওর সঙ্গে (কুন্তলের সঙ্গে) যোগাযোগটা চলে যায়। কোনও সম্পর্কই ছিল না। এমনকি এখনও নেই। কোভিড পরবর্তী সময়ে আমি টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগটা পাইনি। সেটাও আমি ইডি দফতরে জানিয়েছি। ব্যাস, এটাই, এখনও স্ট্যান্ডবাই লোনেই আছে।


আপনি কীভাবে জানতে পারলেন কুন্তল ঘোষের এই গোটা বিষয়টা ?


যেরকম সাধারণ মানুষ জানতে পেরেছে টিভি দেখে, আমিও টিভি দেখেই জানতে পারলাম , বিন্দু মাত্র জড়তা ছাড়াই অকপট সোমা চক্রবর্তী।


আপনি নিজে থেকে কোনও এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন ?


একদমই না। আমি এসবের মধ্য়ে জড়িত নই। আমার পেপার ক্লিন আছে। আমার ওটার সাবমিট করার আছে। বলেন তিনি।


আপনাকে কোন এজেন্সি যোগাযোগ করেছিল ? এবং কতবার আপনি গিয়েছিলেন ?


 খুব দ্রুত উত্তর দেন সোমা এবারও।  না, আমাকে ইডি নোটিস পাঠায়, তাই আমি ইডি দফতরে যাই।


ইডি দফতরে কিছু জানতে চাওয়া হয়েছে আপনার কাছে ?


না সেরকম কিছু না, কীভাবে পরিচয় হল, এবং কী প্রসঙ্গে ট্রানজ্যাকশনটা হল , এগুলিই জানতে চাওয়া হয়েছে। বিজনেসের ব্যালেন্স শিট সহ আমাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল, বলেন তিনি।


 শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে আপনার নাম উঠে আসাকে কীভাবে ব্যাক্ষা করবেন ? 


না, আমি কিছু জানি না। না আমার কোনও এই বিষয়ে আইডিয়া ছিল। এইভাবে কুন্তল ঘোষকে আমি দেখিনি। নাইবা এইভাবে পরিচয় হয়েছে। এই বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র কোনও আইডিয়া নেই। স্পষ্ট করেন সোমা, সাংবাদিককে।


আপনি ব্যবসার খাতিরে লোন নিয়েছেন, তাহলে কোনও ব্যাঙ্কের কাছে গেলেন না কেন ? কুন্তল ঘোষের কাছে কেন গেলেন ?


না, আমার ব্যাঙ্কেও আছে। ব্যাঙ্ক ছাড়াও অনেকে থার্ড পার্টির ট্রানজাকশন হয়। এটা কোনও ভুল বিষয় নয়। নিজের উত্তরেই দাঁড়িয়ে থাকেন সোমা।


আপনি ইডি দফতরে গেছেন, আপনি এই মুহূর্তে চর্চিত নাম, আলোচিত নাম, কী বলবেন ?


মৃদু হেসে, সোমা চক্রবর্তী বলেন, না, এব্যাপারে আমার কোনও কম্যান্টস করাই নেই।


আপনার স্পেসিফিক ব্যবসাটা কি ?


আমার সেলুন ব্যাবসা। অ্যাকচুয়ালি নেল আর্টের বিজনেস। আমার কিছু প্রোডাক্ট আমি বাইরে থেকে ইমপোর্ট করে সাপ্লাইও করি। এই ব্যবসায় আমি শেষ ৯ বছর ধরে করছি। 


আরও পড়ুন, 'বীরভূমের দায়িত্ব নিতে আমি রাজি', অনুব্রত ইস্যুতে মন্তব্য মদনের


আপনার এই ঘটনায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ হয়েছে ?


আবারও হাসেন সোমা। বলেন, পলিটিক্যাল কোনও কনট্যাক্ট নেই আমার। না কোনও লেভেল আছে, না আমার কোনও ওঠাবসা আছে। আমি একজন সাধারণ ব্য়বসা করে খাওয়া...।


ইডি ফের ডেকেছে আপনাকে, আপনি সবরকম সহযোগিতা করবেন ?


একদম , একদম, একদম। হাতে হাত রেখে আস্থার সঙ্গে ইন্টারভিউ শেষ করলেন সোমা চক্রবর্তী।