কলকাতাঃ পার্থ এবং অনুব্রতকে নিয়ে শাসকদলের দুই মত দর্শনে ইতিমধ্যেই উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি। একজনকে দল গঠনের সেই শুরুর দিন থেকে মমতার পাশে দেখা গিয়েছে। ফ্রেঞ্চকাটে -সবুজ পাঞ্জাবিতে তাঁর অমলিন হাসি দেখেছে নাকতলা উদয়ন সংঙ্ঘ থেকে গোটা বাংলা। আর সেই শক্তপোক্ত শিকড় আজ নড়বড়ে। দল সরিয়ে নিয়েছে 'মাটি।' এসএসসি দুর্নীতি মামলায় তদন্তে নেমে তাঁরই বান্ধবীর ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা, সোনা, নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। গ্রেফতার করেছে তাঁকেও। তিনি আর কেউ নন, সদ্য প্রাক্তন তৃণমূলের মহাসচিব তথা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। এবার রইল বাকি ১। অপরজন অবশ্যই অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mandal)। তিনিও দুর্নীতির মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তাকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। তবে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন খোদ দল-সহ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আর এখানেই কারণ দর্শালেন অধ্যাপক তথা তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় (Sougata Roy)। বোঝালেন, 'পার্থ-অনুব্রত ফারাক।' 


 পার্থ-র বান্ধবীর ফ্ল্যাট থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে, অনুব্রত-র থেকে সেরকম কোনও টাকা উদ্ধার হয়নিঃ সৌগত রায়


সৌগত রায় বলেন, 'পার্থ-র ক্ষেত্রে ওর বান্ধবীর ফ্ল্যাট থেকে ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। অনুব্রত-র থেকে সেরকম কোনও টাকা উদ্ধার হয়নি। অনুব্রতর-ও যেটুকু অভিযোগ, সেটা ওর মেয়েকে ঘিরে। কার কী সম্পত্তির হিসেব, সেগুলিতো প্রমাণ-দলিল না দেখে বলা যাবে না।' প্রসঙ্গত, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে দুই দফায় কয়েক কোটি টাকা। উদ্ধার হওয়া টাকার পাশাপাশি জমির অজস্র দলিল, কোম্পানির নথি, সোনা, গয়না বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। প্রকাশ্যে এসেছে বিলাসবহুল গাড়ি। এদিকে গরুপাচার মামলায় গ্রেফতার হওয়ার অনুব্রত-র থেকে নগত না পেলেও ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ১৭ কোটি টাকা প্রথম দফায় বাজেয়াপ্ত করেছে সিবিআই। মিলেছে একাধিক জমি, রাইসমিল, বিলাসবহুল গাড়ির হদিস।এদিকে দুজনকে নিয়ে পুরোপুরি ভিন্ন মত তৃণমূলের।উল্লেখ্য, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে দল ও সরকারের সকল পদ থেকে অপরসারিত করা হয়েছে। সাসপেন্ড করা হয়েছে তৃণমূল থেকে। তবে অনুব্রত মণ্ডলের ক্ষেত্রে কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়নি দল। পাশে দাঁড়িয়েছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়।


আরও পড়ুন, 'তৃণমূলের দুর্নীতির মুকুটে আরও একটি পালক জুড়ল', অনুব্রত-র গাড়িকাণ্ডে কটাক্ষ দিলীপের


পার্থ-অনুব্রতকে ভিন্নমত মমতার


পার্থ গ্রেফতারের পর মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় বলেন, ‘দুর্নীতিকে সমর্থন করা নেশাও নয় পেশাও নয়, আমি কোনও অন্যায়কে সমর্থন করি না। আমার ধারণা রাজনীতি মানে ত্যাগ, কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আচরণে মর্মাহত, কেউ কখনও কখনও ভুল করতেই পারে, জ্ঞানত করলে অপরাধ, অজ্ঞানত করলে আলাদা ব্যাপার। সবাই সাধু, একথা বলতে পারব না, না জেনে ভুল করলে ক্ষমা চাইব, একজন মহিলার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার করেছে, সঠিক সময়ের মধ্যে বিচার হোক, সত্যি যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হয়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হোক’, বঙ্গভূষণ ও বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে অনুব্রত গ্রেফতারের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, 'অনুব্রতকে গ্রেফতার করলেন কেন ? কী করেছিল কেষ্ট ? কেষ্টকে জেলে আটকালে কী হবে ? ওদের এজেন্সির কিছু লোক রয়েছে, তাঁদের টাকা দিয়ে পোষে। মাঝরাতে কেন সিবিআই বাড়িতে ঢুকছে ? কেষ্টর বাড়িতে তাণ্ডব চালিয়েছে সিবিআই।'