কলকাতা: পুলিশ (Police) নাম শুনলেই ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে অনেক বাচ্চার। আগে যেমন ছোটবেলায় মা-ঠাকুমারা 'বর্গি'দের নাম শুনিয়ে বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে দিত, তেমন অনেকেই পুলিশের ভয় দেখিয়ে শিশুমনে এক অন্য ছবি এঁকে দেয়। পুলিশ মানেই যেন রাগী রাগী বিষয়। ভুল করলেই জেলে! কিন্তু মহানগরে (Kolkata) এমন অনেক ঘটনা ঘটে যা সব চিরকালীন ভাবনাকে ছাপিয়ে যায়। 


পুলিশের দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি এবার শিক্ষকের (Teacher) ভূমিকাতেও দেখা গেল এক ট্রাফিক সার্জেন্টকে। ফুটপাতে থাকা এক বাচ্চাকে রীতিমতো 'ছড়ি' হাতে পড়াতে বসানোর সেই ছবিই এখন ভাইরাল (Viral) সোশাল মিডিয়ায় (Social Media)। যা মন কেড়েছে নেটিজেনদের। কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) ফেসবুক পেজেও (Facebook Page) শেয়ার হয়েছে সেই ছবি।                        


ঘটনাটি কী? 


সেই পোস্ট থেকেই জানা গিয়েছে, সাউথ-ইস্ট ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট প্রকাশ ঘোষ, বালিগঞ্জ আইটিআই-এর কাছে ডিউটি করার সময় প্রতিদিনই বছর আটের একটি বাচ্চাকে আশেপাশে খেলাধুলা করতে দেখেন। রাস্তার খাবার দোকানে কাজ করা  তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রটি নজর কাড়ে তাঁর। একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায় বেশ কষ্ট করেই ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছেন একটি সরকারি স্কুলে। সন্তানকে নিয়ে অনেক আশা আকাঙ্খা মায়ের, কিন্তু ছেলের পড়াশোনার প্রতি অনীহা হয়ে উঠছিল চিন্তার কারণ। কর্মস্থান কাছাকাছি হওয়ায় প্রকাশকে চেনেন তিনি। একদিন কথায় কথায় প্রকাশের কাছে নিজের উদ্বেগের কথা ব্যক্ত করে ফেলেন মা। 


আরও পড়ুন, নেহরু মিউজিয়ামের নাম বদলে প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা, আজ উদ্বোধন করবেন মোদি



এরপর সাধ্যমতো সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন ওই ট্রাফিক সার্জেন্ট। যেদিন যেদিন ওখানে ডিউটি থাকে, নিয়ম করে পড়াতে বসান বাচ্চাটিকে। সুযোগসুবিধা অনুযায়ী পড়ানোর সময় বের করেন, কোনোদিন ট্রাফিক সামলানোর ফাঁকে ফাঁকে, আবার কোনোদিন ডিউটি শেষ করে। বাড়ির কাজ অর্থাৎ হোমওয়ার্ক দেওয়া এবং তা দেখে দেওয়া, বানানের ভুল শুধরে দেওয়া, উচ্চারণ, মায় হাতের লেখা পর্যন্ত ঠিক  করে দেওয়া, সবটাই করেন প্রকাশ। গায়ে উর্দি এবং পায়ে গেটার্স থাকায় বসতে অসুবিধে হয়, তাই একটি গাছের সরু ডালের সাহায্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই পড়ান, ডালটিকে পড়ানোর ‘টুল’ হিসেবে ব্যবহার করেন। 


ছেলের ক্রমাগত উন্নতির ফলে মায়ের অসীম আস্থা জন্মেছে ‘শিক্ষক’ প্রকাশের ওপর। তিনি যে বিষয়টিকে এতটা গুরুত্ব দেবেন, তা বোধহয় আন্দাজ করতে পারেননি মা নিজেও। তবে এই ঘটনা ও ছবি দেখে পুলিশ সার্জেন্টকেই কুর্নিশ জানাচ্ছেন সকলে।