হিন্দোল দে, কলকাতা: দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায় ঠাকুমা ও নাতি খুনের ঘটনার নেপথ্যে পরিচিত কেউ। তদন্তে নেমে তেমনই অনুমান পুলিশের। জিঞ্জিরাবাজার তদন্তকেন্দ্রের পাশেই দিনেদুপুরে কীভাবে ঘটল এমন জোড়া খুনের ঘটনা? কেন কেউ কিছু টের পেলেন না? উঠছে নানা প্রশ্ন। পুলিশ সূত্রে খবর, সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে আততায়ীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।


নৃশংস ঘটনা:
মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত। ঠাকুমার সঙ্গে খুন ১২ বছরের নাতিকেও। দিনেদুপুরে যেখানে এই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। তার পাশেই রয়েছে জিঞ্জিরাবাজার তদন্তকেন্দ্র। আর এই ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে শোরগোল দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায়।


কী কারণে খুন? তা নিয়েই উঠছে নানা প্রশ্ন। শুধুমাত্র লুঠের উদ্দেশ্যেই খুন? না কি খুনের পিছনে রয়েছে সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিবাদ? নাকি নিশানায় ছিল ঠাকুমা? সেই খুনের ঘটনা দেখে ফেলাতেই খুন হতে হয়েছে কিশোরকে। এত প্রশ্ন থাকলেও এখনও স্পষ্ট হয়নি খুনের কারণ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যা তদন্তে উঠে এসেছে। তাতে সূত্রের খবর, পুলিশের অনুমান ঠাকুমা-নাতির জোড়া খুনের ঘটনার নেপথ্যে হাত রয়েছে পরিচিত কোনও ব্যক্তির। এই বিষয় নিয়ে মুখ খুলেছেন পরিবারের এক সদস্যও। মৃতার দেওর বিশ্বনাথ মণ্ডল বলেন, 'দরজা খুলত না...পরিচিত না হলে দরজা খুলত না।'


ঘটনা ঘটেছিল শুক্রবার। ওই দিন বিকেলে একটি ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছিল বছর ৬৩-এর মায়া মণ্ডল এবং তাঁর বারো বছরের নাতি সনু মণ্ডলের রক্তাক্ত দেহ। সেই দিনই ওই কিশোরের গৃহশিক্ষকের পড়াতে আসার কথা ছিল। সেইমতো পড়াতে এসে ওই ঘরে জোড়া দেহ পড়ে থাকতে দেখেন গৃহশিক্ষক। খবর পেয়ে পুলিশ এসে দেহগুলি উদ্ধার করে। 


কী উঠে এসেছে তদন্তে:
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সম্পত্তি নিয়ে পরিবারের মধ্যে বিবাদ ছিল। পাশাপাশি, মৃতার ছেলে শেখরের বিয়ে নিয়েও ঝামেলা ছিল। স্ত্রী শেখরের সঙ্গে থাকতেন না, তবে মাঝে মধ্যে নাতিকে দেখতে আসতেন শেখরের শাশুড়ি। বাড়ির কাছেই একটি ধূপের কারখানায় কাজ করেন শেখর। তাঁর দাবি, রোজকার মতো শুক্রবার দুপুরে বাড়িতে এসে বয়স্ক বাবা-মা ও ছেলেকে খাইয়ে ফের কারখানায় গিয়েছিলেন। তারপরই এই ঘটনা। 


মা -ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন শেখর মণ্ডল। তাঁর আক্ষেপ, 'ছেলে-মাকে খাইয়ে কারখানায় এলাম। সব শেষ এখন কী নিয়ে থাকব।' মৃতার ভাই আশিস নস্কর বলেন, 'সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ ছিল। শেখরের বউ থাকে না। বউয়ের মা মাঝ মাঝে আসতেন। বাড়ির সংস্কার করা হয়েছে, তারাও কেউ জড়িত কি না কে জানে।'


এখনও পর্যন্ত ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, দুপুর আড়াইটে থেকে সাড়ে তিনটের মধ্যে ঘটেছে খুনের ঘটনা। তদন্তকারীদের হাতে এসেছে একটি সিসিটিভি ফুটেজ। যেখানে লুঙ্গি পরা এক ব্যক্তিকে হাতে ব্যাগ নিয়ে ছাতা মাথায় যেতে দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে ওই ব্যক্তিকে বেরিয়ে যেতেও দেখা যাচ্ছে। হাতে ছাতা ও ব্যাগ থাকলেও তখন তার পরনে হাফ প্যান্ট। ওই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই গৃহশিক্ষক ও মৃত বৃদ্ধার ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। 

আরও পড়ুন: খুব গরম! এসি ছাড়াই ঠান্ডা থাকবে ঘর, কী করতে হবে?