ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, আশাবুল হোসেন, কলকাতা: ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি বন্ধ হয়েছিল। ফের শুরু হল পথ চলা। আড়াই বছরের অপেক্ষার অবসান। পুজোর (Durga Puja 2022) আগেই খুলে গেল নতুন টালা ব্রিজ (Tala Bridge)। উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। শুক্রবার সকাল থেকে যান চলাচল শুরু হয়ে যাবে নতুন ব্রিজে। তবে আপাতত চলবে না ভারী গাড়ি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ''পুজোর আগে এটা একটা বড় উপহার, এটা হয়ে যাওয়ার ফলে পুজোর আগে যান চলাচলের সুবিধা হবে। এখনও ভারী গাড়ি চলাচল করবে না। কারণ নতুন বাড়িতে ঢুকলেই দেখবেন কল-লাইট ঠিক নেই। তাই সেগুলি দেখবার জন্য একটু সময় দিতে হবে।''
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে মাঝেরহাটে ব্রিজ-বিপর্যয়ের পর কলকাতার সবকটি ব্রিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সেই রিপোর্ট দেখে ২০১৯-এর অক্টোবরে টালা ব্রিজ ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি বন্ধ করে দেওয়া হয় টালা ব্রিজ।
ওই বছর ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত হয় ব্রিজ ভাঙার কাজ। চার লেনের নতুন টালা ব্রিজ লম্বায় ৭৫০ মিটার দীর্ঘ। তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৫০৪ কোটি টাকা। লালবাজার সূত্রে খবর আপাতত ভারী গাড়ি চলবে না। তবে ফোর লেন ব্রিজ। পুজোর আগে ভিড় সামাল দেওয়া যাবে, মানুষের সুবিধা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
রেললাইনের উপর হওয়ায়, পুরনো টালা ব্রিজ ভাঙার কাজ করেছে রেল। তার খরচ নিয়ে বলতে গিয়ে, এদিন রেলকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ''রেল এটাকে ভাঙতে নিয়েছিল। আমাদের রেলকেও টাকা দিতে হয়েছে। ভেবেছিলাম রেল হয়ত সোশাল ওয়ার্ক হিসেবে এটাকে কনসেশন করে দেবে। রেল নিয়েছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। মাঝেরহাটের ক্ষেত্রেও ৩৪ কোটি টাকা দিতে হয়েছে।''
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ''রেল টাকা দিচ্ছে না, বা বাকি রেখে এরকম ঘটনা শোনা যায়নি। যারা মুখ্যমন্ত্রীকে তথ্য বিলি করেন, তাঁরাই কয়েকদিন আগে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে ভুয়ো নিয়োগপত্র বিলি করেছেন।''
দরিদ্র পরিবারকে পুনর্বাসন দিতে রেলের থেকে জমি কিনতে চায় রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ''কিছু গরীব মানুষ এখানে আছেন। আমরা জমি কিনতে চাই রেলের। ১৪৫ পরিবারের জন্য। আমাদের রেল বিক্রি করুক। খালের ধারে যারা আছেন তাদের বাড়ি করতে হবে। এটার জন্য টাকার সমস্যা হবে না। তারা যেন ঠিক থাকে।''
এদিন নতুন টালা ব্রিজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও, মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা যায় রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির কথা। মমতা বলেন, ''১১ বছরে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আগেও একাধিক ব্রিজ করেছিল, মা-৪৫০ কোটি, কামালগাজি - ১০০ কোটি...এই ভাবে অনেক টাকা খরচ। এর ফলে কলকাতায় যান চলাচলে গতি এসেছে। ২০১১ সালে রাজ্যের ক্যাপিটাল এক্সপেনডিচার ছিল ২২২৬ কোটি টাকা, ২০২২- বেড়ে হয়েছে ১৯৩৫৫ কোটি টাকা।''
মমতা আরও বলেন, ''অনেকে বাইরে থেকে এসে দোকান বসাচ্ছে। প্রশাসন ও নেতারা জানে ব্যবস্থা নেয় না৷ পুরো ফুটপাত দখল হলে কি করে হবে? আমি হকারদের পক্ষে। আমি বলেছিলাম কার্ড চালু করতে। এবার সময় এসেছে এটা করার।''
পুজোয় বাড়তি আয়ের জন্য সারা বছর ধরে অপেক্ষায় থাকেন হকাররা। আর অন্যদিকে নতুন টালা ব্রিজ চালু হওয়ায়, অবশেষে যানজটের যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলবে বলে আশাবাদী নিত্যযাত্রীরা।