অনির্বাণ বিশ্বাস ও পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা : প্রচণ্ড ঝড়ের মাঝে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কলকাতার  (Kolkata) রবীন্দ্র সরোবরে (Rabindra Sarobar)। কালবৈশাখীর (Kalbaishaki) সময় রোয়িং ক্লাবে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি (accident) ঘটে। ঝড়ের সময় রোয়িং করতে গিয়ে রবীন্দ্র সরোবরে তলিয়ে গেল ২ কিশোর। ঘটনার পর প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা তল্লাশি চালায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। শেষমেশ ২ জনের দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে (hospital) নিয়ে গেলে তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। রোয়িং বোটে থাকা ৫ জনের মধ্যে ২ জনের মৃত্যু (death) হয়েছে। জানা গিয়েছে, মৃতদের মধ্যে একজন সাউথ পয়েন্টের পড়ুয়া। অপর মৃত পড়ুয়া এক পুলিশকর্তার ছেলে বলে জানা গিয়েছে।


ঠিক কীভাবে দুর্ঘটনা


আর পাঁচটি দিনের মতো এদিনও চলছিল রোয়িং ক্লাবে রোয়িং প্রশিক্ষণ। কিন্তু বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ঝড়ের মাঝে পড়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। হালকা বৃষ্টিও হাওয়ার মধ্যে প্রশিক্ষণে নামে পাঁচটি রোয়িং বোট। কিন্তু রবীন্দ্র সরোবরের মাঝ বরাবর তারা পৌঁছতেই পড়ে যায় প্রবল ঝড়ের কবলে। যে ঝড়ের মাঝেই একটি রোয়িং বোট উল্টে যায়। যে বোটে ছিলেন পাঁচজন। যে অঞ্চলে রোয়িং বোলটি উল্টে যায়, সেখানে জলের গভীরতা প্রায় ২০ ফুট। রোয়িং বোট উল্টে যাওয়ার পর সেটিতে থাকা তিনজন ও বাকিরা সাঁতরে পাড়ে পৌঁছতে পারলেও বাকি দু'জন পারেননি। পাড়ে ফিরেই দু'জন গোটা ঘটনার কথা জানানোর পরই সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তল্লাশি। কিছুক্ষণ পরেই একজনের খোঁজ মিললেও প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর অপর একজনের খোঁজ মেলে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দু'জনকেই হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।


রেসকিউ বোট তরজা


রোয়িং ক্লাব থাকলেও পরিবেশবিদদের পিটিশনের ভিত্তিতে রবীন্দ্র সরোবরে কোনও রেসকিউ বোট (rescue boat) বা অবর্জাভারি বোট থাকার নিদান নেই। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে তরজা। প্রশ্ন উঠেছে, যদি রেসকিউ বোট থাকত, তাহলে কি এভাবে প্রাণ খোয়াতে হত দুই কিশোরকে। ঘটনাস্থলে গিয়ে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও বলেন, পরিবেশবিদদের বুঝতে হবে রেসকিউ বোট রাখা থাকে দুর্ঘটনা এড়াতেই। রবীন্দ্র সরোবরেও যদি তেমনটা রাখা যেত, তাহলে হয়তো এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটত না।


ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডব রাজ্যজুড়ে 


 রাজ্যের একাধিক জেলায় প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে শনিবার সন্ধেয়। বর্ধমানে (Bardhaman) ঝড়ে ভেঙে তাতে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় এক কিশোরের। একইসঙ্গে আহত হন দুই জন। অন্যদিকে আলিপুরেও (Alipore) ঝড়ে ভেঙে পড়ে গাছ। ডাফরিন রোডে গাছ ভেঙে পড়ে দুমড়ে মুচড়ে যায় ট্রাফিক সার্জেন্টের (Traffic Sergent) বাইক। অন্য়দিকে প্রবল বৃষ্টিতে ব্যাহত মেট্রো চলাচলও (Metro facility)। সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল টালিগঞ্জ থেকে নিউ গড়িয়া পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা।


আরও পড়ুন: Weather Update: কলকাতাসহ একাধিক জেলায় ৫০ থেকে ৬০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া, মুষলধারে বৃষ্টি


আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস ছিলই, শুক্র ও শনিবার কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হতে পারে, সঙ্গে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া। তবে আলাদা করে ঝড়র সম্ভাবনা ছিল না। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান , বীরভূম মুর্শিদাবাদ, নদিয়া জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত বেশি ছিল।


আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আন্দামানে ঢুকে পড়েছে বর্ষা। পাশাপাশি, শক্তিশালী দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু। রাজস্থান থেকে উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং উত্তরবঙ্গের ওপর দিয়ে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত অক্ষরেখা। এর প্রভাবে উত্তরবঙ্গে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। 


আরও পড়ুন- ঝড়ের তাণ্ডব ইডেনজুড়ে, প্লে-অফের প্রাক্কালে ছুটে এলেন মহারাজ