কলকাতা: প্রথমে খুন। তারপর ট্রলি ব্য়াগে দেহ ভরে কলকাতায় মা-মেয়ে। হাড়-হিম করা ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা কলকাতাকে। কিন্তু, কেন এই খুন? কীসের আক্রোশ? উঠছে সেই প্রশ্ন। অসমে নিহত সুমিতা ঘোষের বেশ কিছু সম্পত্তি থাকার খবর পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সেই সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ থেকেই কি খুন? খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
খুনের পর দেহ কেটে ট্রলি ব্য়াগে ভরে উত্তর ২৪ পরগনার মধ্য়মগ্রাম থেকে কলকাতায় এনে গঙ্গা ফেলে দেওয়ার সময় হাতেনাতে পাকড়াও। কিন্তু কেন এই খুন?
কীভাবে খুন? মৃত সুমিতা ঘোষ, সম্পর্কে ফাল্গুনীর পিসিশাশুড়ি। নিহত প্রৌঢ়ার বাড়ি অসমে। শ্বশুরবাড়ি বর্ধমানে। তবে দীর্ঘ দিন তাঁর স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, ১১ ফেব্রুয়ারি মধ্যমগ্রামে ফাল্গুনীদের ভাড়াবাড়িতে আসেন সুমিতা। অভিযোগ, সোমবার তাঁদের মধ্যে ঝগড়ার সময় পিসি শাশুড়ির মাথা দেওয়ালে ঠুকে দেন ফাল্গুনী। বছর পঞ্চান্নর সুমিতা কিছুক্ষণের জন্য অচৈতন্য হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরলে ফের বচসা শুরু হয়, অভিযোগ, সেইসময় ফাল্গুনী ইট দিয়ে পিসি শাশুড়ির মুখ থেঁতলে দেন। দেহ ব্যাগে পুরতে বঁটি দিয়ে দুটি পায়ের নীচের অংশ কেটে ফেলা হয় বলে অভিযোগ। এরপরই গঙ্গায় দেহ ফেলার ছক কষেন মা-মেয়ে। কিন্তু কুমোরটুলির বাসিন্দাদের তৎপরতায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
ধৃত ফাল্গুনীর সঙ্গে তাঁর শ্বশুরবাড়ির তেমন কোনও সম্পর্ক ছিল না। তারপরও পিসিশাশুড়ি সুমিতা ফাল্গুনীর ভাড়াবাড়িতে কেন গেলেন? অসমে নিহত সুমিতার বেশ কিছু সম্পত্তি থাকার খবর পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ থেকেই কি খুন? সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মা ও মেয়েকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
২০১৮ সালে অসমের জোড়হাটের বাসিন্দা শুভঙ্কর ঘোষের সঙ্গে বিয়ে হয় ফাল্গুনীর। তিন বছর পর, শিলিগুড়ি এসে শুভঙ্করের মামা সুব্রত ঘোষের বা়ড়িতে থাকতে শুরু করেন তাঁরা। সূত্রের দাবি, সেইসময় সেই বাড়িতে একটি বড় চুরির ঘটনা ঘটে। শিলিগুড়ি থানায় FIR করেন ফাল্গুনীর মামাশ্বশুর। তদন্তে নেমে ফাল্গুনীকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তিনি জামিন পেয়ে যান। ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয় ২০২৩ সালে। চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আসেন ফাল্গুনীর শ্বশুর। সঙ্গে আসেন ফাল্গুনী। চিকিৎসার পর শ্বশুর সুবল ঘোষ ফিরে গেলেও, মায়ের সঙ্গে কয়েকটা দিন কাটিয়ে যাওয়ার কথা বলে থেকে যায় ফাল্গুনী। আর এর কদিন পর, মধ্যমগ্রাম থানায় স্বামী শুভঙ্কর ঘোষের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন ফাল্গুনী। একবছর পর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে পুরনো মামলা তুলতে চাপ দেওয়ার অভিযোগ জানিয়ে, নতুন একটি মামলা করেন। দুটো মামলাই বর্তমানে বারাসাত আদালতে চলছে।
আরও পড়ুন: Tangra News: বিলাসবহুল জীবনযাপনেই এমন বিপর্যয়? ট্যাংরাকাণ্ডে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর পথে পুলিশ