কৃষ্ণেন্দু অধিকারী: দলীয় পদ ছেড়ে কার্যত বোমা ফাটালেন কুণাল ঘোষ। পদ কেন ছেড়েছেন তা বলতে গিয়ে দলের বর্ষীয়ান নেতার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন কুণাল ঘোষ। 


কেন পদ ছাড়লেন কুণাল?
এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন, 'মমতা আমার নেত্রী, অভিষেক আমার সেনাপতি। কিন্তু এই দুই পদ আমি রাখতে চাই না, আমি নেতৃত্বকে জানিয়েছি। ভেবেচিন্তে মনস্থির করে জানিয়েছি। কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা হচ্ছে। মিসফিট বলে মনে হচ্ছে। আমি খাপ খাওয়াতে পারছি না। অথবা দলের সংগঠন খাপ খাওয়াতে পারছি না। আমি এমন কোনও নেতা নই যে তার জন্য এটা নিয়ে আলোচনা হবে। তার থেকে সরে থাকা ভাল। আমি ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি অনুরোধের জন্য বসে আছি সেটা ভাবার কোনও কারণ নেই।'


উত্তর কলকাতা তৃণমূলের (Kunal on  সাংগঠনিক সভায় আমন্ত্রণ করা হয়নি কুণাল ঘোষকে (Kunal Ghosh Exclusive)। সেটাই কি ঘৃতাহুতি দিল কুণাল ঘোষের ক্ষোভে? সেই বিষয়ে প্রশ্ন করলেই কার্যত তোপ দাগলেন কুণাল। উত্তর কলকাতা জেলা তৃণমূলের সংগঠন নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বিরদ্ধে একের পর এক অভিযোগ করলেন তিনি। উত্তর কলকাতায় ক্যালকাটা বয়েজ স্কুলের মধ্যে একটি ফ্ল্য়াটে দলীয় অফিস চলছে। তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কুণালের তোপ, 'ক্যালকাটা বয়েজ স্কুলে জেলা সভাপতি ফ্ল্যাট দখল করে আছে। অফিসটা স্কুলের মধ্যে। ওটা তো জেলা অফিস হতে পারে না। কেন স্কুলের মধ্যে রাজনীতির আখড়া হবে?' দলীয় বৈঠকে কাকে ডাকা হবে না সেটা কীভাবে উনি ঠিক করবেন, প্রশ্ন কুণালের। তাহলে তাঁকে কেন ডাকা হয়নি? কুণালের কটাক্ষ, 'উনি একটু বড়সড় শাহজাহানের মতো। দাড়ি রাখেন। আমায় দেখতে খারাপ। তাই ডাকেনি।'


দলের সাংসদকে শুধুমাত্র শেখ শাহজাহানের সঙ্গে তুলনা করেই থামেননি। আরও বড় অভিযোগ করেছেন তৃণমূলে সদ্য পদত্যাগী মুখপাত্র (Kunal Ghosh on Sudip Banerjee)। কুণাল ঘোষের অভিযোগ, 'সব জায়গায় বিজেপি বনাম তৃণমূল। একমাত্র উত্তর কলকাতায় বিজেপির দুই প্রার্থী। একজন বিজেপির প্রতীকে ভোটে দাঁড়াবেন, আরেকজন লড়বেন জোড়াফুল প্রতীকে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির লোক, উনি হাওয়া বুঝে সেই দিকে যান। সুদীপবাবুর সচিবের ছেলে বিজেপি নেতা।' 


উত্তর কলকাতা তৃণমূলে যা হচ্ছে তাতে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের অনেকে আহত হয়েছে। কোনও কোনও কর্মী ন্যায়বিচার না পেলে অন্য কারও কাছে যান, সেভাবে গেলেই জেলা সভাপতির অপ্রিয় হয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ কুণালের। তাঁর তোপ, 'সুদীপবাবুর সমস্যা হচ্ছে এই, উনি সারাক্ষণ এই পলিটিক্স করে বেড়াবেন। শেষে কর্মীদের ভোটে নেমে ওঁকে জেতাতে হয়। কারণ তখন তো উনি দিদির প্রার্থী। দলের প্রার্থী। কর্মীদের আবেগের উপর ভর করে জিতে যান। এটা দলের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়।' সুদীপের বিরুদ্ধেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৈরির অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'আমি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃণমূলে ফেরার দরজা খুলে দিয়েছিলাম। আর আজ সেই সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ই গ্রুপবাজি করছেন।' সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর কলকাতায় তৃণমূলের বিধায়ক। তাঁর বিধানসভা এলাকার মধ্যেই ২টি ওয়ার্ডে হেরে গিয়েছে তৃণমূল। সেই প্রসঙ্গ তুলেও কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ' নিজেদের এলাকায় দুটো ওয়ার্ড জেতাতে পারে না, জেলা সামলাতে গেছে।'


মমতা ও অভিষেককে নিয়ে কী বললেন কুণাল?
এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে কুণাল বললেন, 'যে জায়গাটা উপভোগ করতে পারছি না। কোথাও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, যন্ত্রণা থাকছে। সেটা আমি বইব কেন। আমার নেতা তো দিদিই থাকছেন, অভিষেকই থাকছেন। অভিষেককে শুধু আমি নেতা হিসেবে সম্মান করি না, আই লাভ অভিষেক।'


আরও পড়ুন: 'মা-বোনেদের সঙ্গে যা হয়েছে, তার জবাব দিতে হবে', সন্দেশখালি নিয়ে তোপ মোদির