কলকাতা: সকালে দলত্যাগী তাপস রায়ের সঙ্গে একমঞ্চে ছিলেন, তার পরই দুপুরে রাজ্য সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দিল তৃণমূল। সেই নিয়ে এবার মুখ খুললেন কুণাল ঘোষ। অনেকে প্রকাশ্যে বিরোধী দলের নেতাদের গুণগান করেও পার পেয়ে যান অনেকে, সেখানে তিনি নেহাত সৌজন্য দেখিয়ে কী দোষ করেছেন, প্রশ্ন তোলেন তিনি। কেন তাঁকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে, দলীয় নেতৃত্বের উদ্দেশে এই প্রশ্নও ছুড়ে দেন কুণাল। (Kunal Ghosh)
বুধবার উত্তর কলকাতায় একটি রক্তদান শিবিরের মঞ্চে সেখানকার বিজেপি প্রার্থী, প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তাপসের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কুণাল। বক্তৃতা করতে গিয়ে তাপসের ভূয়সী প্রশংসাও করেন তিনি, ছাপ্পা নয়, মানুষের পছন্দের নিরিখে ভোট হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন। এর পরই দুপুরে কুণালকে দলের রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা জানায় তৃণমূল। কুণালের মন্তব্য, একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত, তা দলের মন্তব্য নয় বলে জানিয়ে দেয় জোড়াফুল শিবির। (TMC Removes Kunal)
তৃণমূলের এই বিবৃতি ঘিরে শোরগোল পড়ে গেলেও, দীর্ঘ ক্ষণ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি কুণালের। সন্ধেয় শেষ পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। জানান, আগেই দলের মুখপাত্র এবং রাজ্য সম্পাদকের পরিচয় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মুছে দিয়েছেন তিনি। নিজে থেকেই অব্যাহতি চেয়েছিলেন তিনি। তাই তিনি যে পদ চাইছেনই না, তা থেকে তাঁকে সরানোর কোনও অর্থ তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানান কুণাল।
তাপসের সঙ্গে যে মঞ্চে এদিন দেখা গিয়েছে তাঁকে, সেটি একটি অরাজনৈতিক মঞ্চ বলে জানান কুণাল। তাঁর দাবি, নেহাত সৌজন্যের খাতিরেই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন এবং সৌজন্যটুকুই দেখিয়েছেন। তাপস যে ভাল নেতা, ভাল জনপ্রতিনিধি, তা তাঁর সঙ্গে এতদিন কাজ করে বুঝেছেন, সেই অনুভূতিই ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি, দলের প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও উল্লেখ করেছেন। এখানে দলের বিরুদ্ধে কোনও অবস্থান নেননি তিনি। অথচ প্রকাশ্যে এমন আচরণ করেও অনেকে পার পেয়ে যান বলে এদিন ফের সরব হন কুণাল।
অতি সম্প্রতি তৃণমূলের তারকা সাংসদ তথা প্রার্থী দেবের সঙ্গেও মতবিরোধ দেখা দেয় কুণালের। বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে 'গদ্দার' বলে আক্রমণ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যা সমর্থন করেননি দেব। বরং মিঠুনকে তাঁর কাছে অভিভাবকের মতো, তাঁদের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে বলে জানান। সেই সময় দেবকে তীব্র কটাক্ষ করেন কুণাল। আদিখ্যেতা করে কিছু তারকা নিজেকে উদার দেখাতে চাইছেন বলে কটাক্ষ করেন।
এদিনও দেবের কথা ফের উঠে আসে কুণালের মুখে। তাঁর বক্তব্য, "যিনি মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন, সেই মিঠুনকে দেব বাবার মতো বলে উল্লেখ করেন, কিডনি দিতে পারেন বলেও জানান। কই তখন তো ক্যুইজমাস্টার জেগে ওঠেন না? আমি কী দোষ করেছি? আমের থেকে আক্রমণাত্মক কথা আর কে বলে? আজ অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে আমাকে? দলের লড়াকুদের রোজ কেন অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে? কারও সঙ্গে দেখা হলেই রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠবে? এসব হয় নাকি?" কুণালকে পদ থেকে সরানো নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলেও, এদিন দেব যদিও কোনও মন্তব্য করেননি।
কুণালের অপসারণের যে বিবৃতি প্রকাশ করে তৃণমূল, তার নীচে স্বাক্ষর ছিল ডেরেক ও'ব্রায়েনের। তাঁকেও এদিন কটাক্ষ করতে ছাড়েননি কুণাল। কুণাল বলেন, "আমি নিজেই তো থাকতে চাইনি! আমি মিসফিট, অব্যাহতি দেওয়া হোক আগেই বলেছি। তার পর ক্যুইজ মাস্টার এমন বিবৃতি কী করে দেন, জানি না।"
তৃণমূলের বিবৃতি লেখা হচ্ছে বলে দুপুরেই তাঁর কাছে খবর পৌঁছেছিল বলে জানিয়েছেন কুণাল। তাঁর দাবি, খবর পেয়ে ফোন বন্ধ করে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। উঠে দেখেন বিবৃতি এবং এতকিছু। তবে সন্ধে পর্যন্ত হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমেলে আনুষ্ঠানিক পত্রটি হাতে আসেনি বলেও জানান। কুণালের বক্তব্য, "যাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা মহান ব্যক্তি, মহানুভব। ঈশ্বর তাঁদের মঙ্গল করুন। আমি তৃণমূলের সাধারণ কর্মী, সাধারণ সৈনিক। আগামী দিনেও তা-ই থাকতে চাই।" এতকিছুর পর বিভিন্ন জায়গা থেকে দলের কর্মী সমর্থকদের কাছ থেকে বার্তা পাচ্ছেন, ফোন মেসেজে ভরে যাচ্ছে বলে জানান কুণাল।