কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, গোপাল চট্টোপাধ্যায়: খুনের অপরাধে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দু’জনের প্রেম, পরিণয়। করোনাকালে প্যারোলে ছাড়া পেয়ে অস্থায়ী সংসারে জন্ম নিল দুই ফুটফুটে সন্তান। কাল স্বাধীনতা দিবসে নিরপরাধ সেই দুই শিশু মায়ের সঙ্গে যাচ্ছে বন্দি হতে! সেই সঙ্গে কারার লৌহকপাটের ভিতর যেন মুখ ঢাকতে চলেছে রূপকথা! ঘটনার সাক্ষী এবিপি আনন্দ।
এ যেন এক রূপকথার গল্প। থিয়েটার, দু’জন অচেনা মানুষের জীবনে আনল প্রেম। রিহার্সালের ফাঁকে ফাঁকে ভাব বিনিময়। প্রশাসনের সম্মতিতে আইনি বিয়ে। ভিন রাজ্যে থিয়েটার করতে গিয়ে মধুচন্দ্রিমা। শেষমেশ করোনা আবহে তাঁদের জীবনে এল ফুটফুটে যমজ সন্তান।
বীরভূমের লাভপুরের বুদ্ধদেব মেটে এবং মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির রুনা আদতে জন্ম দিলেন এক ইতিহাসের। বুদ্ধদেব মেটে জানিয়েছেন, নাটকের সূত্রে ওর সঙ্গে পরিচয়। নাটক দিয়েই সম্পর্ক শুরু। বুদ্ধদেব মেটের স্ত্রী রুনা মেটে জানিয়েছেন, নাটকই দুজনকে কাছে এনে দিয়েছিল। দু-জনেই ১৮-১৯ বছর আগে খুনের অপরাধে যাবজ্জীবনে দণ্ডিত। বুদ্ধদেবের ঠিকানা লালগোলা মুক্ত সংশোধনাগার। রুনা থাকেন বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে।
অচেনা দুই মানুষের নিস্তরঙ্গ জীবনে একদিন ধূমকেতুর মতো এলেন অভিনেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য। প্রশাসনকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে সংশোধনাগারের বাসিন্দাদের নিয়ে মঞ্চস্থ হল নাটক।
বহরমপুর রেপার্টরি থিয়েটারের পরিচালক প্রদীপ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, তাসের দেশ থেকে প্রেম। লড়াই ছিল, কী করে বিয়ে দেওয়া যায়। রক্তকরবী করতে গিয়ে দিল্লিতে হনিমুন। প্রথমে তাসের দেশ, তারপর তোতা কাহিনী, সব শেষে রক্তকরবী।
নাট্যব্যক্তিত্ব দেবঙ্কর হালদার জানিয়েছেন, থিয়েটারের একটা বঙ্গানুবাদ হয়েছিল আপনারা সবাই মশাইগণ, রাগ ঘৃণাকে আটকান। থিয়েটার যাঁদের জীবনে প্রেম আনল, করোনাকালে প্যারোলে মুক্ত হয়ে তাঁরাই জন্ম দিলেন দুই পুত্র সন্তানের। অস্থায়ী সংসারে নতুন অতিথিদের বয়স সবে সাত মাস।
রক্তকরবীর বিশু-নন্দিনীর প্রেম পূর্ণতা পায়নি। কিন্তু বুদ্ধদেব-রুনা সংসার পেতেছেন। কিন্তু এই পূর্ণতার গল্পের শেষেও যে ট্র্যাজেডি! ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবসে ফের বন্দি হচ্ছে বুদ্ধদেব-রুনার জীবন। বুদ্ধদেব ফিরছেন লালগোলা মুক্ত সংশোধনাগারে। দুই শিশুকে নিয়ে রুনার গন্তব্য বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। রূপকথার শেষে রূঢ় বাস্তব হল এটাই, সাত মাসের দুই নিরপরাধ শিশুকে মায়ের কোলে চড়ে যেতে হচ্ছে বন্দি জীবনে।