কলকাতা: তিনি খাদের কিনারায় পৌঁছে গিয়েছেন। নতুন প্রজন্মকে জায়গা করে দিতে হলে, সময় থাকতে সরে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। গত কয়েক মাসে বার বার এমন কথা শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। তাতে দলের অন্দরে তাঁর অবস্থা নিয়ে জোর জল্পনা চলছে। সেই পরিস্থিতিতেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) হয়ে জোর সওয়াল করতে দেখা গেল কামারহাটির তৃণমূল (TMC) বিধায়ক মদন মিত্রকে (Madan Mitra)। দুর্নীতিকাণ্ডে একের পর এক নেতার নাম জড়ানোয় যখন অস্বস্তিতে তৃণমূল, সেই সময় অভিযুক্তদের একহাত নিলেন তিনি। 


দুর্নীতির অভিযোগে অস্বস্তিতে তৃণমূল, মানলেন মদন


শনিবার, ষষ্ঠীর সন্ধেয় একদা সতীর্থ শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোলপার্কের ফ্ল্যাটে হাজির হন মদন। এবিপি আনন্দের ক্যামেরার সামনে সেখানে নিখাদ শারদীয়ার আড্ডা জমান তাঁরা। সেখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে সওয়াল করেন শোভন, মদন দু'জনই। নিয়োগ দুর্নীতি থেকে গরুপাচার, একের পর এক হেভিওয়েট তৃণমূল নেতার নাম উঠে আসায় দল যখন অস্বস্তিতে, সেই সময় মমতার হয়ে মাঠে নামতে দেখা গেল মদনকে। 


দুর্নীতির অভিযোগে একের পর এক নেতা জড়িয়ে পড়ায় তৃণমূল যে অস্বস্তিতে পড়েছে, তা একবাক্যে স্বীকার করেন মদন। কিন্তু অন্যের কর্মের দায় মমতা কেন নেবেন, কার্যত সেই প্রশ্নই তোলেন তিনি। মদনের কথায়, "যে, যা খুশি করব, সবটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একা সামলাবেন, এটা ঠিক নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে।"


আরও পড়ুন: Sovan Chatterjee: ৫৬ ইঞ্চির মতো ফিতে দিয়ে মাপা যায় না, হৃদয় দিয়ে রাজনীতি করেন মমতা, বললেন শোভন


নিয়োগ দুর্নীতিতে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন মমতার মন্ত্রিসভার প্রাক্তন দু'নম্বর মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। তাঁর বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। সেই নিয়ে আগেও মুখ খুলেছিলেন মদন। ষষ্ঠীর সন্ধেয়ও পার্থকে নিয়ে কোন রাখঢাক করলেন না মদন। শোভন-বৈশাখীকে নিয়ে সমালোচনার রেশ টেনে বলেন, "শোভন নিজেই বলে দিয়েছে, ওরা বন্ধু নয়। লিভ ইন করছে। এর পর কোনও কথা আসে না। আসলে আমরা বাঙালিরা অন্যের ব্যাপারে বড্ড মাথা গলাই। আজ পার্থর জন্য খারাপ লাগছে। কিন্তু ও যদি অন্যের ব্যাপারে মাথা না গলিয়ে, নিজের ব্যাপারে মাথা গলাত, আজ ওকে পস্তাতে হত না।"


নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার পার্থকে কটাক্ষ মদনের


তৃণমূলে একেবারে সূচনা পর্ব থেকে মমতার সঙ্গে রয়েছেন মদন। মমতার ঘনিষ্ঠবৃত্তে একসময় অন্যতম নাম ছিলেন তিনি। মমতার মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন। বর্তমানে কামারহাটির বিধায়ক পদে থাকলেও, তৃণমূলের ভোট যত বেড়েছে, ততই পিছনের সারিতে চলে গিয়েছেন মদন। নতুনদের জায়গা করে দিতে সম্প্রতি সরে যাওয়ার কথাও বলতে শোনা যায় তাঁকে। তাহলে কি রাজনীতির প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মেছে তাঁর! মদনের যুক্তি, "খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আমি। সরে না গেলে পড়ে যাব।"