করুণাময় সিংহ, অভিজিৎ চৌধুরী ও সুমন ঘড়াই, মালদা: পুরাতন মালদার স্কুলে পড়ুয়াদের পণবন্দি করার চেষ্টা করলেন এক ব্যক্তি। উদ্যত আগ্নেয়াস্ত্র। হাতে ঢুকে পড়েন ক্লাসরুমে। শেষ মুহূর্তে ডিএসপি আজহারউদ্দিন খান ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই ব্যক্তিকে ধরে ফেলেন। অভিযুক্ত অবশ্য বলেছেন, 'আমার ছেলেও নাবালক, তাঁকে যখন পুলিশ এবং সরকার অপহরণ করতে পারে, আমি তো সাধারণ মানুষ।' 


তবে সূত্রের খবর, এই প্রথম নয়, আগেও হাতে বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পুলিশকে দিতে দেখা গিয়েছিল দেব বল্লভকে। গতবছর জুন মাসে স্ত্রীকে ফেরানোর দাবিতে এক হাতে বোমা, আরেক হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ফেসবুক পোস্টে পুলিশকে হুমকি দিয়েছিল মালদার মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য রীতা বল্লভের স্বামী। ভাইরাল হয় ভিডিও। 


সেই সময় পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সাংসারিক অশান্তির কারণে বছর দুয়েক আগে স্বামীকে ছেড়ে চলে যান বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য। যদিও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দেব বল্লভ দাবি করেন, পুলিশ-প্রশাসন তাঁর স্ত্রী-পুত্রকে অপহরণ করেছে। পরে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ, বোমা। পরে অবশ্য জামিন পেয়ে যান দেব বল্লভ। 


মালদায় কী হয়েছে এদিন?  


বুধবার সকাল। সবে, সপ্তম শ্রেণির বাংলার ক্লাস শুরু হয়েছে। হঠাৎই, ক্লাসরুমে ঢুকে পড়েন এই ব্যক্তি। সটান পিস্তল তাক করেন শিক্ষিকা ও পড়ুয়াদের দিকে। হাতে অটোমেটিক নাইন এম এম পিস্তল। সামনে টেবিলের উপর রাখা দুটো কাচের বোতল। তাতে পেট্রোল। অভিযুক্তের দাবি, তাঁর কোমরে ও ব্যাগে রয়েছে অত্যাধুনিক বোমা। শরীরে বিভিন্ন অংশে লুকোনো রয়েছে একাধিক ছুরি। 


অভিযুক্তদের দাবি, 'আগে যখন পিস্তল নিয়েছিলাম, সেই সময় জানিয়েছিলাম, যে আপনারা যদি ব্যবস্থা না করেন, তাহলে আমি আত্মঘাতী হামলা চালাব। একসঙ্গে যেখানে কোনও মিটিং-মিছিল থাকবে সেখানে গিয়ে আত্মঘাতী হামলা চালাব, যাতে আমার এক সন্তানের জন্য ৫ হাজার মায়ের কোল খালি হয়।' 


তাঁর বাড়ি মালদার মুচিয়াতেই।তাঁর স্ত্রী রিতা বল্লভ। তিনি মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। ২০১৮ সালে বিজেপি টিকিটে জয়লাভ করলেও, পরে তিনি যোগ দেন তৃণমূলে। অভিযুক্তের দাবি, তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই স্ত্রীর সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ করতে পারছেন না। এর মধ্যেই ২০২০ সালে, পঞ্চায়েতে আস্থা ভোটের দিন, তাঁর ছেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়।


দেব বল্লভ বলেন, 'প্রধানের অনাস্থা হল, সেদিন আমি আমার স্ত্রীকে টিভিতে দেখতে পেয়েছি, দেখতে পেয়ে আমি তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, বলেছি, আমার ছেলেকে নিয়ে গিয়ে কি ওর মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো যাবে? দেখা করানো যাবে? ওরা বলেছে, নিয়ে আসবি। তারপরে, কী হল, তারা আমার ছেলেকে ওই গাড়িতে তুলে নিয়ে গেল। আমি পিছন পিছন দৌড়চ্ছি।' 



তাঁর আরও দাবি, এই বিষয়ে প্রশাসনের সব স্তরে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।



এই কথোপকথনের মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অভিযুক্তের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এই পুলিশ অফিসার। কোনওক্রমে অভিযুক্তের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হয় বন্দুক। ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসরুম থেকে বের করে, অভিযুক্তকে টানতে টানতে স্কুলের মাঠে নিয়ে আসা হয়। তখনই দেখা যায়, তার ডান পায়ে লিউকোপ্লাস্ট দিয়ে আটকানো রয়েছে একটি ছুরি। 


আরও পড়ুন, বাবার পর এবার মেয়ে, অনুব্রতর গ্রেফতারির ৮ মাসের মাথায় মেয়েও গ্রেফতার