করুণাময় সিংহ, মালদা: ছেলেবেলায় ঠাকুমা-দিদিমাদের হাতে তৈরি পাটিসাপটা, গোকুল পিঠে, পুলি পিঠের স্বাদ এখনও লেগে রয়েছে মুখে। কিন্তু পল্লবী, চৈতালি, পুতুলদের আফসোস, এখন তাদের মায়েদের হাতে সেই সময় নেই। শীত এলেই পিঠে-পুলির অপেক্ষা করে ওরা সবাই। স্কুল পড়ুয়াদের এই ইচ্ছের কথা জানতেন শিক্ষিকারা। তাই তাদের মন ভাল করার জন্য স্কুলেই আয়োজন হল পিঠে পুলি উৎসবের। শিক্ষিকা আর ছাত্রীদের হাতেই মালদার পাকুয়াহাট যদুনাথ বালিকা বিদ্যালয়ে বসল পিঠে-পুলি উৎসবের আসর।
মালদার পাকুয়াহাট যদুনাথ বালিকা বিদ্যালয়ের এই আয়োজনে অভিভূত শিক্ষা মহল। এলাকায় বেশ প্রসিদ্ধ এই স্কুলটি। স্কুলে একটি হস্টেল রয়েছে। অনাথ ছাত্রীদের সেখানে থাকার জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। স্কুলের মাঠেই হয়েছে এই উৎসব। পিঠে পুলি উৎসব করার ভাবনা এসেছিল স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অনুশ্রী সাহার মাথায়। দেরি করেননি তিনি। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে সমস্ত আয়োজন সেরে ফেলেন। কথা বলা হল স্কুলের ছাত্রীদের সঙ্গে। শুধু উৎসবে মাতলেই হবে না, পিঠেও বানাতে হবে বলে জানানো হয় পড়ুয়াদের। হস্টেলে থাকা পড়ুয়ারা মূলত পিঠে বানিয়েছেন, সাহায্য় করেছেন শিক্ষিকারা। স্কুলের মাঠের মধ্যেই স্টল বসিয়ে হয়েছে উৎসব। স্টলে বসে নিজেদের হাতে বানানো পিঠে-পুলি বিক্রি করলেন স্কুলের ছাত্রীরা। ফিতে কেটে এই অনুষ্ঠানের সূচনা করেন বামনগোলের বিডিও রাজু কুন্ডু।
স্কুলের ছাত্রী পল্লবী সরকার বলেন, 'স্কুলের দিদিমণি হঠাৎ করেই বললেন পিঠে পুলি উৎসব হবে স্কুলে। আমাদেরই পিঠে বানাতে হবে। সেই মতো আমরা পাটিসাপটা, তেল পিঠে, রসবড়া- অনেককিছু বানিয়েছি।' একাই বানিয়েছেন সব? পড়ুয়ারা জানিয়েছেন স্কুলের শিক্ষিকারা তাঁদের সাহায্য করেছেন। পল্লবী বলেন, 'প্রচুর মানুষ আমাদের স্টলে এসেছিলেন। আমাদের স্কুলের পাশাপাশি অন্য স্কুল থেকেও অনেকে এসেছিলেন। আমরা ভীষন খুশি।'
এই উৎসবের মূল উদ্যোক্তা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অনুশ্রী সাহা বলেন, 'বামনগোলার মত প্রত্যন্ত ব্লকে এই ধরনের আয়োজন কখনো হয়নি। হঠাৎ করেই মাথায় এল তাই এই আয়োজন। এতে ছাত্রীরা ভীষণ আনন্দ পেয়েছে। প্রতিবছর এই ধরনের আয়োজন করার কথা ভাবছি।'
শুধুমাত্র পিঠে-পুলি উৎসব হয়েছে তাই নয়। সঙ্গে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। স্কুল পড়ুয়ারাই নাচ-গানের আয়োজন করেছে। আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে মেয়েদের। বামনগোলার মত প্রত্যন্ত ব্লকে এই ধরনের আয়োজনে অভিভূত শিক্ষা মহল। জেলার বিশিষ্ট শিক্ষক শুভ্র মৈত্র বলেন, 'পড়াশোনার পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের একটু বিনোদনের প্রয়োজন। এই ধরনের আয়োজন নিঃসন্দেহে অতুলনীয়। সময় করে প্রতিটি স্কুলে এই ধরনের আয়োজন করা হলে ছাত্র-ছাত্রীরা আনন্দ পাবে। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।'
আরও পড়ুন: 'রক্ষাকবচ দিলে হাজিরা'! শেখ শাহজাহানের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ