করুণাময় সিংহ, মালদা: আবাস যোজনাকে (Awas Yojana) ঘিরে ভূরি ভূরি অভিযোগ সামনে এসেছে। সেই সব খতিয়ে দেখতে বাংলায় এসে পৌঁছেছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। তাতেই সামনে এল অদ্ভূত ঘটনা। দেখা গেল, বিহারের প্রাক্তন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের নাম রয়েছে বাংলার আবাস যোজনার তালিকায়। মালদা জেলার (Malda News) একটি গ্রামে গিয়ে বিষয়টি জানতে পেরে হতবাক কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল।


বিহারের প্রাক্তন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের নাম বাংলার আবাস যোজনার তালিকায়!


মঙ্গলবার মালদা জেলার রতুয়ার গোবিন্দপুর গ্রামে যান কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। সেখানে গিয়ে কার্যতই হতবাক হয়ে যান সকলে। দেখা যায়, বিহারের কাটিহার জেলার বাসিন্দা, সেখানকার গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য, শ্যাম যাদবের না রয়েছে বাংলার আবাস তালিকায়। বাড়িতে গিয়ে যদিও শ্যামের দেখা মেলেনি।


রতুয়ার ১ নম্বর ব্লকের মহানন্দাটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গোবিন্দপুর গ্রাম। সেখানে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের দুই সদস্য গতকাল পৌঁছলে, বাড়ির এক মহিলা সদস্য জানান, তাঁদের এলাকা বিহার এবং বাংলা, দুই রাজ্যের মধ্যেই পড়ে। জায়গাটি নিয়ে বিবাদ রয়েছে। বিষটি সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে মালদা জেলা প্রশাসন।


আরও পড়ুন: Mecheda Fire: মেচেদায় স্টেশনের কাছে ঝুপড়িতে আগুন, ঝলসে মৃত্যু বাবা ও মেয়ের


স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তালিকা মেলাতে মেলাতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল গোবিন্দপুর গ্রাম ছাড়িয়ে বিহারে প্রবেশ করে। বহরসাল গ্রামটি কাটিহার জেলার অন্তর্গত। দুর্গাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে পড়ে সেটি। সেখানেই শ্যাম যাদবের কথা জানা যায়। বিহারের বাসিন্দ শ্যামের নাম কী ভাবে তালিকায় এল, ওঠে প্রশ্ন। শ্যাম যাদবের মা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের সামনে তা কার্যত মেনে নেন যে, তাঁরা বিহারের বাসিন্দা। কিন্তু ওই এলাকা বিহার এবং বাংলা, দুই রাজ্যের মধ্যে পড়ে বলেও দাবি করেন তিনি।  


মালদা প্রশাসন জানিয়েছে, তাদের বিষয়টি জানা ছিল না। গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রতুয়া ১ নম্বর ব্লকের বিডিও-কে।  এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাইলে রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “যত দিন যাবে এমন অনেক তথ্য সামনে আসবে। এই সরকারটাই চঞ্চল সরকার। এটা কোনও সরকার নয়। এটা দখলদারির নামান্তর মাত্র। পাহাড় থেকে সাগর, আবাস যোজনায় সর্বত্র একই অবস্থা।  যে যে ভাবে পেরেছেন, তালিকায় নাম ঢুকিয়ে দিয়েছেন। আর প্রান্তিক মানুষরা মাথার ছাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর বাইরে নতুন কোনও দৃষ্টান্ত তৃমমূল সরকার স্থাপন করতে পারবে না।”


এই ঘটনায় রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে


তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘শমীকবাবুকে স্মরণ করিয়ে দিই, নিশীথ প্রামাণিক কিন্তু তাঁদের পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী। তাঁর বাবার নাম, বিধায়কের নাম, গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের নাম থেকে শুরু করে একঝাঁক বিজেপি নেতাদের নামও দেখেছই আমরা। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের পরিবারের নামও দেখেছিলাম গরিব মানুষের প্রাপ্য রেশন কার্ডেও। এগুলো স্মরণ রাখুন শমীকবাবু। যাতে এক জনও অযোগ্য মানুষ বাড়ি না পান, তার জন্য ১৭ লক্ষ নাম আগেই বাদ গিয়েছে। প্রশাসনিক স্তরে এখনও কাটছাঁট চলছে, যাতে অযোগ্য ব্যক্তির নাম বাদ যায়। আবাস যোজনায় আগেই সাত-আট বছর বাংলাকে বঞ্চিত করেছেন। অনুমোদন দিলেও এখনও ১১ লক্ষ বাড়ির প্রথম কিস্তি, যা ৭ জানুয়ারির মধ্যে দেওয়ার কথা ছিল, তা এখনও দেননি। বাংলার সঙ্গে এমন প্রতিহিংসা না করে, কেন্দ্রকে বলুন প্রাপ্য টাকা মিটিয়ে দিতে। এটা কেন্দ্রের মন্ত্রীদের পকেটের টাকা নয়, বাংলা থেকে নিয়ে যাওয়া করের টাকা।’’